Thursday, November 7, 2019

মোটর সাইকেল চালানোর নিয়ম- নতুনদের জন্য ( motor bike driving tutorial for beginners )

01/
         

                     মুহাম্মদুল্লাহ  চৌধুরী








মোটর বাইকিং And ড্রাইভিং A টু Z 

প্রস্তুতি পর্ব

দিন দিন মোটরসাইকেলের জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। মোটরসাইকেলের বিশেষত্ব অন্য কোন যানবাহনে নেই। এ্যাক্সিডেন্টের কথা বাদ দিলে মোটরসাইকেল সত্যিই একটি অতি প্রয়োজনীয় জিনিষ। কার- এর চেয়ে এর ফুয়েল খরচও অনেক কম। পার্কিং এর জন্য জায়গা কম লাগে। মেইনটেইন্যান্স খরচ কম, দামও কম। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে দূর্ঘটনা!! দূর্ঘটনার সাথে ভাগ্যের ব্যাপার তো আছেই কিন্তু তার চেয়ে বেশি হচ্ছে ঠিকমত চালাতে না জানা। এক তৃতীয়াংশ মোটরসাইকেল এ্যাক্সিডেন্ট ঘটে নতুনদের। নতুন বলতে আমি তাদের বোঝাচ্ছি যারা ৫,০০০ কি:মি: এর নীচে চালিয়েছেন!! সুতরাং বুঝতেই পারছেন যারা বন্ধু’র মোটর সাইকেল কয়েকবার চালিয়ে ভেবে বসে আছেন, আমি মোটরসাইকেল চালাতে এক্সপার্ট-তারা কতটা ভুল ভেবেছেন। বহু প্র্যাকটিস ছাড়া এক্সপার্ট তো দুরে থাক-আপনি রাস্তায় চালানোর যোগ্যতা অর্জন করতে পারবেননা। আর আমাদের দেশে টাকা দিলেই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায়। সেটা পেলেই আপনি অভিজ্ঞ হয়ে গেছেন তা বলা যায়না। তাছাড়া আমাদের দেশের মোটর সাইকেল প্র্যাকটিকাল পরীক্ষা খুব নিখুঁত পরীক্ষা নয়।
এ’পদ্ধতি বাস্তবে কতটা কাজে লাগে তা পরীক্ষাতে বসলেই বুঝতে পারবেন। সাইটটি পড়ে আপনার মনে হতে পারে এত নিয়ম মনে রাখবো কি করে। আসলে পড়ার সময় অনেক কিছু মনে হলেও কাজ গুলো যখন বহুবার প্র্যাকটিস করে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন তখন অবচেতন মনেই আপনি ঠিক কাজটি করবেন। কেউ যখন মার্শাল আর্ট চর্চা করেন তখন আপনি হয়তো দেখে থাকবেন তারা বিভিন্ন রকম এক্সারসাইজ করেন- যাতে সত্যিকার মারামারির সময় চিন্তা ভাবনা করে হাত-পা চালাতে হয় না । মারামারির সময় স্বয়ংক্রিয় ভাবেই তাদের হাত পা চলতে থাকে। মানুষের ব্রেন এতই শক্তিশালী যে, যেকোন সুপার কম্পিউটারের চাইতেও দ্রুত প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে পারে। দরকার শুধু নিয়ম জেনে প্র্যাকটিসের। আমরা অনেকেই মোটর সাইকেল চালাতে জানি কিন্তু সেই জানাটা কতটা ঠিক-এই ব্লগটি পড়লেই বুঝতে পারবেন। এই লেখা শুধু নবিসদের জন্যেই নয়- অনেক এক্সপার্টও লেখাটি পড়ে উপকৃত হবে বলে আমার বিশ্বাস। আপনার বোঝার সুবিধার জন্য প্রচুর ছবি দেওয়া হয়েছে।
One Bike for All- এমন কোন বাইক পাওয়া সম্ভবত: মুশকিল। এক একটি বাইক এক এক জনের জন্য প্রযোজ্য। আপনার হাইট যদি বেশি হয়, আর আপনি যদি একটি 50 C.C বাইকে ঘুরে বেড়ান; সেটা বেমানান দেখাবে। আপনার উচ্চতা ও ওজন অনুসারে মোটর সাইকেল কেনা উচিত। অবশ্য আপনার বাজেট যদি অল্প হয় তাহলে সেটা আলাদা কথা। যেহেতু ফুয়েলের দাম দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে সে ক্ষেত্রে বাইক কেনার আগে ফুয়েল খরচের দিকে খেয়াল রাখা উচিত। বিশেষ করে যারা প্রায় সারাদিনই বিভিন্ন কাজে মোটর সাইকেলে উপরই থাকেন তাদের জন্যে তো ফুয়েল সংক্রান্ত দিকটা খেয়াল রাখা উচিত। আপনার মোটর সাইকেলের সি.সি (কিউবিক সেন্টিমিটার) যত বেশি হবে; সাধারনত: তেল খরচ তত বেশি হবে। একটা ৫০ সি.সি, মোটর সাইকেল আর একটি ১২৫ সি.সি. মোটর সাইকেলের তেলের খরচের অনেক পার্থক্য। তবে সি.সি. যত বেশি হবে বাইকের শক্তি তত বেশি হবে এত জানা কথায়।
একজন বডিবিল্ডারের যেমন শক্তি বেশি; তেমনি তার খাবারের পরিমাণও বেশি। আমরা সাধারন মানুষেরা যেমন কম খেয়ে থাকি; আমাদের শক্তিও বডি বিল্ডার বা রেসলারদের তুলনায় অনেক কম। এবার হর্স পাওয়ার আর টোর্ক সম্পর্কে জেনে রাখুন। (যে যন্ত্রের সাহায্যে হর্স পাওয়ার ও টোর্ক মাপা যায় তাকে ডায়নামোমিটার বা সংক্ষেপে ডায়নো বলে।) অনেকে মনে করেন হর্স পাওয়ার (১ Horse Power বা ১ অশ্বশক্তি = প্রতি সেকেন্ডে ৫৫০ ফুট পাউন্ড) বেশি মানেই খুব ভাল মোটর সাইকেল-ব্যাপারটা শুধু তাই নয়; এর সংগে টোর্কও সম্পর্কযুক্ত। (Torque মানে হচ্ছে টেনে নেওয়ার শক্তি।) এখানে একটা উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটা বোঝা যাবে। ধরা যাক, আপনার খুব বেশি ২৫ হর্স পাওয়ারের একটা বাইক আছে; যার টোর্ক ১০ফুট/পাউন্ড । এক্ষেত্রে আপনার বাইক জোরে যাবে অবশ্যই তবে সেই সম্পূর্ন গতি পেতে সময় লাগবে। এবার একটি ৭০ফুট/পাউন্ড টোর্কের ইঞ্জিন; যার হর্স পাওয়ার মাত্র ৫৫।
সে চট করে স্পীড তুলতে পারবে; কিন্তু খানিকক্ষনের মধ্যেই বেশি হর্স পাওয়ারের মোটরসাইকেলের পেছনে পড়ে যাবে। সে’জন্য বাইক কেনার সময় আপনার প্রয়োজন অনুসারে হর্স পাওয়ার ও টোর্ক দেখে কিনুন। বিশেষজ্ঞদের মতে বর্তমান সময়ে হর্স পাওয়ারের চেয়ে টোর্ক বেশি হওয়ায় ভাল। বিশেষ করে আমাদের দেশের রাস্তা উন্নত দেশের মত নয়; হঠাৎ করে গতি পেলে আমাদের জন্যে সুবিধে হয়। মনে রাখবেন, Horsepower = Speed, Torque = Pull/Push forceবাংলাদেশে একসময় Honda কোম্পানীর মোটর সাইকেল ছিল খুবই জনপ্রিয়। যার জন্য এখনও অনেকে মোটর সাইকেলকে ‘‘হোন্ডা’’ বলে থাকেন। সেই সাথে Yamaha মোটর সাইকেলের বাজার বেশ ভাল ছিল। এগুলো বেশির ভাগ ছিল টু-স্ট্রোক ইঞ্জিন বিশিষ্ট মোটরসাইকেল। এখন অবশ্য বেশির ভাগই ফোর-স্ট্রোক ইঞ্জিন।

বিভিন্ন ধরনের মটর সাইকেল

মোটরসাইকেল সাধারনত: নয় ভাগে ভাগ করা যায়। নিচে ছবি সহ সেগুলোর বর্ননা দেওয়া হলো।

স্কুটার :-

স্কুটারের দাম কম, নীচু সীট, ফ্লোর বোর্ড (ভেতরে পা রাখার ব্যবস্থা)আছে, টায়ারের সাইজ ছোট। সাধারনত: শহরের মধ্যে চালানোর জন্য ভালো। মেয়েরা স্কুটার চালাতে বেশি পছন্দ করেন। লাগেজ বহন করার জন্য অনেক সময় সীটের নীচে অনেক জায়গা থাকে। তবে ব্রেকিং সিস্টেম অন্যান্য মোটরসাইকেলের মত উন্নত নয়। কাঁচা রাস্তায় চালানো কঠিন। যেমন-
-LML Vespa, Honda Silverwing, Mahindra Duro


ক্রুজার/চপার:-

ক্রুজারের সীট গুলো হয় নীচু । হ্যান্ডেল বার থাকে উঁচুতে, ফুট পেগ্স থাকে সামনের দিকে যাতে আপনি পা লম্বা করে রাখতে পারেন। অনেকে বলেন এই বাইক গুলো সবচেয়ে আরামদায়ক। কিন্তু লং জার্নিতে এদের কোথাও দেখা যায়না। । এমনিতে এগুলো বেশ নিরাপদ কিন্তু বাঁক ঘুরতে এতে অসুবিধা। যেমন-
Honda Shadow VLX, ,Bajaj Avenger, Yamaha  Enticer. 


স্ট্যান্ডার্ড EnticerStandard):-

আমাদের দেশে ইন্ডিয়ান মোটরসাইকেল সবচেয়ে জনপ্রিয়। এককালে জাপানী মোটরসাইকেল ছাড়া দেখা যেতনা। Honda CDI 125, HS-100 এবংCD 80 জাপানী মোটরসাইকেল গুলো খুবই টেকসই । কিন্তু দাম অত্যন্ত বেশি এবং দেখতে তেমন আহামরি কিছু নয় বলে ইন্ডিয়ান বাইক গুলো যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এগুলোর দাম বেশ কম। ফুট পেগ্স সরাসরি পায়ের নিচে থাকে, যার জন্য মোটর সাইকেল কন্ট্রোল খুব সহজ হয়ে যায়। এদের ওজন ৯০ থেকে ১৫০ কেজির মধ্যে । এগুলোর মধ্যে বেশি গতি ও বেশি শক্তির সমন্বয় চাইলে ১৫০ সিসি’র বাইকগুলো ভাল। যেমন-
Honda Unicorn, Bajaj Pulsar, Hero Hunk, Yamaha FZ-FZS, Tvs Apache, Hero CBZ. এই মোটর সাইকেলগুলো বেশ শক্তিশালী সেইসাথে দেখতেও সুন্দর। ১৫০ সিসি’র গুলোর মধ্যে রাজা হচ্ছে Yamaha R-15. এর দাম অত্যন্ত বেশি। পেট্রোল খরচ কমাতে চাইলে ১০০ সিসি-১২৫সিসি’র বাইকগুলো কিনতে পারেন।


স্পোর্টস (Sport):-

এই বাইকগুলো আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য নয়। দামও সাধারণের নাগালের বাইরে। এই বাইক গুলোর সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ২৫০ কি:মি: থেকে ৩০০ কি:মি: পর্যন্ত হয়ে থাকে!! নতুনদের জন্য এগুলোকে ‘‘ডেথ বাইক’’ বলা হয়। তাছাড়া দূরত্ব বেশি হলে এটা চালানো বেশ কষ্টকর। বহুক্ষন ঘাড় নিচু করে চালাতে হয় বলে অল্পতে ঘাড় ব্যথা হয়ে যায়। এগুলোর দামও আকাশছোঁয়া। যেমন-
Yamaha YZF R1, Suzuki Hayabusa ইত্যাদি।


স্পোর্টস টুরীং (Sport-Touring):-

শক্তিশালী ইঞ্জিন, আরামদায়ক সীট, উইন্ডশীল্ড আর স্যাডল ব্যাগ যুক্ত মোটর সাইকেল। শহুরে রাস্তা থেকে পাহাড়ী রাস্তা সবখানেই মজা। লং জার্নিতে এই মোটর সাইকেলগুলো ভাল। যেমন-
Yamaha FJR 1300.


টুরীং (Touring):-

সবরকম সুবিধা সম্বলিত বাইক হচ্ছে টুরীং বাইক। রেডিও, স্টেরিও, জিপিএস, ইন্টারকম, ক্রুজ কন্ট্রোল, হীটেড সীট, উইন্ডশীল্ড, স্যাডলব্যাগ এবং ট্রান্ক- এগুলো সবই আছে। এগুলোর ওজন ও দাম খুব বেশি (১৫,০০০ থেকে ২৫,০০০ ডলার!!)। যেমন-
Harley Davidson FLSTC HERITAGE SOFTAIL .


ডুয়েল স্পোর্ট (Dual Sport):-

নতুন যারা মোটরসাইকেল চালানো শিখছেন তাদের জন্য এই বাইক গুলো সবচেয়ে ভালো। এগুলোর ওজন কম এবং যে কোন রাস্তায় চলার জন্য উপযোগী। পিছলে পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা কম এবং পড়ে গেলেও মোটর সাইকেলের তেমন বড় কোন ক্ষতি হয়না। যেমন-
Kawasaki KLR650, Honda XL250, XL350.


ডার্ট (Dirt):-
এই বাইক গুলো বাজে রাস্তার জন্যেই তৈরী হয়েছে। গ্রামের কাঁচা রাস্তার জন্য আদর্শ। এগুলো মেইন রোডে খুব জোরে চলতে পারেনা। কারন এর টায়ার গুলো এত বেশি খাঁজ কাটা যা বাইকের স্পিড কমিয়ে দেয় কিন্তু বাজে রাস্তায় খুবই কাজে আসে। এখানে আপনার জেনে রাখা উচিত, টায়ার যত বেশি খাঁজ কাটা হবে তত পিছলে যাওয়ার সম্ভবনা কমবে। কিন্তু স্পিড যথেষ্ঠ পাবেননা। সেই জন্য স্পিড বাইক গুলোর টায়ার খুব মসৃন হয়-যাতে সর্বোচ্চ স্পিড পাওয়া যায়। ডার্ট বাইকের উদাহরণ যেমন-Honda CRF 450.
বি:দ্র: স্ট্যান্ডার্ড বাইক ছাড়া অন্য বাইক গুলো বাংলাদেশে সহজলভ্য নয়। কোনটি কোন ধরনের বাইক তা জানানোর জন্য লেখা হল।

বাইক কেনার সময়

যে বাইকটি কিনবেন সেটা শো-রুমেই ভালমত পরীক্ষা নিন। আপনার বাইকটি যখন বিদেশ থেকে আমদানী করা হয় তখন এটা একটা ক্রেটের সংগে বেঁধে নিয়ে আসা হয়। নতুন বাইকে ছোটখাট অনেক সমস্যা থাকতে পারে। এখানে একটা চেক লিস্ট দেওয়া হলো। কেনার সময় ব্যাপার গুলো মিলিয়ে নিলে সার্ভিসিং এর জন্য বার বার দোকানে আসার ঝামেলা থেকে বাঁচবেন। আমি নিজে যখন প্রথম মোটর সাইকেল কিনেছিলাম তখন আমার বাইকের প্রটেক্টরটা ভাঙ্গা ছিল। বাসায় ফিরে দেখি এই অবস্থা। যা এক বছরেও চেঞ্জ করে পাওয়া যায়নি।
সামনে দিক:-
  • 1. সামনের ও পেছনের টায়ার ঠিক মত লাগানো আছে কিনা- টায়ারে গায়ে দেখুন তীর চিহ্ন আছে। সেটা মোটর সাইকেল যেদিকে যাবে সেদিকে দিক নির্দেশ করছে কিনা দেখে নিন।
  • 2. টায়ারের পাম্প বা এয়ার প্রেসার টায়ারে যা লেখা আছে সে মত পাম্প রাখবেন। সাধারনত: স্ট্রিট বাইকে ৩৮ পিএসআই এবং ৩২ পিএসআই ডুয়েল স্পোর্টস বাইকে প্রযোজ্য।
  • 3. ফ্রন্ট এক্সেল বোল্ট টাইট করুন।
  • 4. ব্রেক চেপে দেখে নিন এর কার্যকারিতা ঠিক আছে কিনা।
  • 5. এখনকার বেশির ভাগ বাইকই অবশ্য স্পোক লেস। রীম বাঁকা হওয়ার সম্ভবনা তবুও রীম সোজা আছে কিনা ভালমত দেখে নিন। স্পোক থাকলে সেগুলো ঠিক মত লাগানো আছে কিনা দেখুন।
  • 6. স্টিয়ারিং হ্যান্ডল ঠিকমত যেন ঘোরে চেক করুন। স্টিয়ারিং যে নাট বল্টু দিয়ে লাগানো থাকে সেগুলো যথেষ্ঠ টাইট কিনা খেয়াল করুন।
  • 7. বাইকে চেপে বসে খেয়াল করুন ফর্ক বা শক অ্যাবজর্বার ঠিকমত ওঠানামা করছে কিনা।
  • 8. আপনার বাইকটির সীট যদি অ্যাডজাস্টটেবল হয়; তাহলে আপনার উচ্চতা অনুযায়ী অ্যাডজাস্ট করে নিন।
  • 9. ক্লাচ কেব্ল আর থ্রটল কেবল ঠিক করে নিন। দেখে নিন গিয়ার ক্লাচ করা অবস্থায় সহজেই চেন্জ করা যাচ্ছে কিনা। নইলে ক্লাচ অ্যাডজাস্ট করতে বলুন।
  • 10. বাইকটি স্থির থাকা অবস্থায় ইঞ্জিন অয়েল যথেষ্ঠ আছে কিনা দেখে নিন।
  • 11. চেন অতিরিক্ত ঢিলা বা টাইট থাকলে প্রয়োজনমত অ্যাডজাস্ট করে নিন।

ব্রেক ইন/ওয়্যার ইন পিরিয়ড:

নতুন ইঞ্জিনের পূর্ণ ক্ষমতা এবং স্থায়ীত্ব বৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। বাইক কেনার পর এর নতুন ইঞ্জিন এর অংশ গুলো একে অন্যের সাথে ঘর্ষণের মাধ্যমে মসৃন হয়। এই মসৃনতর করার প্রক্রিয়াটি সঠিক হলে ইঞ্জিনের স্থায়ীত্ব অনেক বেড়ে যায়। এই সময়টুকুকে বলা হয় ব্রেক ইন/ওয়্যার ইন/রানিং ইন পিরিয়ড বলে। ব্রেক ইন বা ওয়্যার ইন দু’ভাবে করা যায়। আপনার মোটরসাইকেল ম্যানুয়ালে যেটা লেখা আছে প্রথমে সেটা আলোচনা করা যাক।
ম্যানুয়ালে লেখা থাকে প্রথম ১০০০ কি:মি: পর্যন্ত সর্বোচ্চ ঘন্টায় ৪০ কি:মি: এর বেশি গতিবেগে চালাবেননা। ওভারলোড করবেননা। এই নিয়মটি ভাল। কিন্তু নতুন মোটর সাইকেল যতদিননা ১০০০ কি:মি: পার না হচ্ছে ততদিন আপনি কাউকে নিয়ে ঘুরতেও পারছেননা বা ৪০/৫০ কি:মি: এর চেয়ে বেশি জোরে চালাতেও পারছেননা। অন্য একটি নিয়ম আছে। যেটা শর্টকাট পন্থা।বর্তমানের আন্তর্জাতিক মানের মোটরসাইক্লিস্টরা তাদের মোটর সাইকেলে ওয়্যার ইন করেন কিভাবে তা এবার জানবেন। (তবে এই ব্রেক-ইন রেসিং মোটরসাইকেলের জন্য যতটা প্রযোজ্য স্ট্যান্ডার্ড মোটরসাইকেলের জন্যে নয়। সুতরাং ব্রেক-ইনের ব্যাপারে বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নিন। এক্ষেত্রে ম্যানুয়াল ফলো করলে আপনার ইঞ্জিনের আয়ু বাড়বে।)
শর্টকাট ব্রেক-ইন করবার জন্য একটি ফাঁকা ও লম্বা রাস্তা বেছে নিলে সুবিধে হবে। এই কাজের জন্য আপনি বাইক চালাতে অভিজ্ঞ না হলে আপনার অন্য কোন অভিজ্ঞ লোকের সাহায্য নেওয়া উচিত। প্রথমে ইঞ্জিন স্টার্ট করে ২ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর ৮ কি:মি: একটানা চালান ঘন্টায় ৩৫/৪০ কি:মি:। স্পিড কমানোর জন্য ব্রেক না চেপে ইঞ্জিন ব্রেক ব্যবহার করুন। অর্থাৎ ব্রেক ব্যবহার না করে বাইকের গতি কমাতে চাইলে শুধু থ্রটল কমিয়ে দিন।
এবার রাস্তার একপাশে থেমে ইঞ্জিন ৫ মিনিটের জন্য বন্ধ করুন। আবার ১০ মিনিট বাইকটি আগের নিয়মে চালান এবং ৫ মিনিটের জন্য ইঞ্জিন বন্ধ রাখুন। এতে ইঞ্জিন টেম্পারেচর সমান ভাবে ভাগ হয়ে যাবে।
এবার ৫০/১০০ কি:মি: এর কোর্স। অাঁকাবাঁকা রাস্তা বা পাহাড়ী রাস্তা এই কাজের জন্য উপযুক্ত। আপনি এক্ষেত্রে ফুল থ্রটল দিয়ে পুরো rpm ব্যবহার করবেন। ইচ্ছে করলে স্পিডোমিটারের কাঁটা সামান্য লাল দাগও পার করতে পারেন!! ঘন ঘন গতি
ন আর কমান। এখানেও গতি কমাতে ইঞ্জিন ব্রেক ব্যবহার করুন অর্থাৎ থ্রটল কমিয়ে বাইকের গতি নিয়ন্ত্রন করুন। ব্যাপারটা খেয়াল করেছেন কি- এখানে আপনার ম্যানুয়ালের সাথে এই ব্রেক-ইনের কোন মিল নেই! অথচ বিশ্বের সেরা মোটরসাইক্লিস্টগণ এই ব্রেক-ইন ফর্মূলা ব্যবহার করে তাদের বাইকের স্থায়ীত্ব শর্টকার্টে বাড়িয়ে নিয়েছেন। তবে আপনার হাতে যথেষ্ঠ সময় থাকলে এভাবে ব্রেক-ইন না করাটাই সবদিক থেকে মঙ্গল!! 
বাড়ী ফিরে এসে আপনার ইঞ্জিন অয়েল (যেটাকে আমরা অনেকে মবিল বলে থাকি; যদিও মবিল একটি ইঞ্জিন অয়েলের নাম!) বদলে ফেলুন। সেইসাথে আপনার অয়েল ফিল্টারটি পরিবর্তন করে ফেলুন। অয়েল ফিল্টারের দাম ৩০/৩৫ টাকা মাত্র-কিন্তু এগুলো ব্যবহার করা আপনার বাইকের কার্বোরেটর ভালো রাখে। ইঞ্জিন অয়েল ইঞ্জিনের প্রধান খাবার। ইঞ্জিন কর্মক্ষম রাখতে ইঞ্জিন অয়েল নিয়মিত পরিবর্তন করতে হবে। আপনার ম্যানুয়াল যদি বলে ১০০০ কি:মি: পরপর বদলাতে; আপনি বদলাবেন ৭০০ কি:মি: পরপর। কারন ব্রেক- ইন করার ফলে সত্যিকার অর্থেই যন্ত্রপাতির ছোট ছোট কণা ভেংগে গিয়ে ইঞ্জিন অয়েলের সাথে মিশে যায়। এই কণাগুলো ইঞ্জিনের জন্য ক্ষতিকর। আপনার ইঞ্জিনের জন্য কোনটা বেশি প্রয়োজনীয় তা আপনার ম্যানুয়ালে লেখা আছে। SE,SF,SG,SH,SJ,SL এগুলো যথাক্রমে লো গ্রেড থেকে হাই গ্রেড ইঞ্জিন অয়েল। যেখানে প্রচন্ড ঠান্ডা পড়ে সেখানে অপেক্ষাকৃত হাই গ্রেড ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশের জন্য SG SAE 10W/30 বা SG SAE 20W/50 মানের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করা উচিত।
এখন আপনার বাইকের ব্রেক-ইন পিরিয়ড শেষ হলো। এখন আপনার বাইকের ইঞ্জিন রিং, সিলিন্ডার ওয়াল, ট্রান্সমিশান গিয়ার সমস্ত ধকল নেওয়ার জন্য প্রস্ত্তত। এখন আপনি ইচ্ছেমত বাইকটি ব্যবহার করতে পারেন। শুধু খেয়াল রাখবেন, একই স্পীডে বহুক্ষণ চালাবেননা। টপ গিয়ার ঘন্টায় ৪০ কি:মি: ওঠার পর ব্যবহার করা ভালো।

02/


মোটরসাইক্লিস্টদের পোশাক পরিচ্ছদ: 


মোটরসাইক্লিস্টদের মধ্যে একটা কথা প্রচলন আছে। সেটা হচ্ছে-‘‘দু’ধরনের মোটরসাইকেল চালক আছেন; একজন ইতিমধ্যে দূর্ঘটনার শিকার হয়েছেন আর অন্যজন দূর্ঘটনার জন্য তৈরী হচ্ছেন।’’ অর্থাৎ বাইক চালাতে গেলে আপনার পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা প্রচুর!! কেউ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারেনা যে তার দূর্ঘটনা ঘটবেনা। ধরা যাক, আপনি বাইক চালাতে এক্সপার্ট- কিন্তু বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাক ড্রাইভারও কি যথেষ্ঠ এক্সপার্ট ? কেউ কেউ একবার পড়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার সাবধান হোন। অনেকে সেই সুযোগই পাননা। সরাসরি পরকালে পাড়ি জমান! আমি চাইনা আপনার দূর্ঘটনা ঘটুক বা বাইক চালানোর ব্যাপারে আতঙ্কিত হয়ে উঠুন। আমি শুধু বলছি, বাইক চালান কিন্তু সবধরনের সাবধানতা অবলম্বন করেই। 
মোটর সাইকেল চালানোর আগে আমাদের অবশ্যই প্রয়োজনীয় পোশাক পরিচ্ছদ পরে নেওয়া উচিত। আমাদের দেশে অনেকে লুঙ্গি পরেও মোটরসাইকেল চালান যা শুধু দৃষ্টিকটুই নয়; অত্যন্ত বিপদজনক। মোটর সাইকেল চালানোর জন্য আলাদা পোশাক কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের মত গরম দেশে জ্যাকেট পরে বাইক চালানো সত্যি কষ্টকর! তবুও বাঁচতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় পোশাক পরে নেওয়া উচিত। ঘন্টায় মাত্র ২০ কি:মি: গতিতে থাকা অবস্থায় আপনি যদি কোন পিচ ঢালা রাস্তায় আছাড় খান- আক্ষরিক অর্থেই পিচ আপনার চামড়া তুলে নেবে!! অথচ সাধারনত: আমরা কমপক্ষে ঘন্টায় ৪০ কি:মি: থেকে ৭০ কি:মি: গতিতে বাইক চালিয়ে থাকি। এই অবস্থায় পড়লে কি হবে বুঝতেই পারছেন। সুতরাং রিস্ক নেবেন কেন?

হেলমেট

বাইক চালানোর জন্য হেলমেট হচ্ছে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বস্ত্ত। মোটরসাইকেল চালানোর সময় আমাদের মাথাটা ডিমের খোসার মত হয়ে যায়। লক্ষ্য করেছেন কি- চলন্ত অবস্থায় সামান্য একটা পোকায় কত জোরে আঘাত করে? ঐ গতিতে কোন শক্ত জিনিষের সাথে আপনার মাথা বাড়ি খেলে কি হবে আশাকরি বুঝিয়ে দিতে হবেনা। যত কাছেই যাননা কেন-গরম, বিরক্তিকর ইত্যাদির অযুহাত দিয়ে হেলমেট বাদ দেবেননা। হেলমেট শুধু আঘাতই নয়; পোকা,বাতাস,বৃষ্টি,ধুলো,ঠান্ডা ইত্যাদি থেকেও আপনাকে রক্ষা করে।
আদর্শ হেলমেট কোনটি? বাজারে অনেক রকম হেলমেট দেখতে পাওয়া যায়। এখানে ছবির সাথে সাথে বর্ননাও দেওয়া হলো। এখন আপনি বেছে নিন কোনটা আপনার জন্যে সবচেয়ে প্রয়োজনীয়।

পাশের ছবির হেলমেট গুলোর নাম bowl helmetএটাকে আপনি ‘‘নাই মামার চেয়ে কানা মামা’’ ভালো বলতে পারেন। শুধু মাথাটা বাঁচে। কান, মুখ, গলা, ইত্যাদি সুরক্ষিত হয়না। 



এটা হাফ হেলমেট। আগেরটার চেয়ে ভাল। চট করে খুলে ফেলা যায়। মাথার সাথে সাথে কানও রক্ষা পায়। বাইকার রাস্তা সহ আশপাশটাও ভালোমত দেখতে পান। ক্রুজার টাইপ মোটর সাইকেল যারা চালান তাদের জন্য আদর্শ। 



এটা Open face Helmet বা ৩/৪ হেলমেট বলে। এটি মাথা, মুখ, কান ইত্যাদি বেশ ভালমত বাঁচায়। ছোটখাট কাজ করার জন্য যেমন, খাওয়া, ছবি তোলা ইত্যাদির জন্য না খুললেও চলে। 


পাশেরটি full face Helmet সুরক্ষার জন্য এটিই সবচেয়ে আদর্শ হেলমেট। এতে আপনার পুরো মুখটাই বাঁচে। এগুলোর দামও বেশি। অসুবিধা হচ্ছে ছোট খাট কাজের জন্য পুরোটাই খুলতে হয়। এখন অবশ্য front flip helmet ও বেরিয়েছে। দেখতে full face helmet এর মতই; তবে প্রয়োজনে উপরের অংশটা খোলা যায়। তবে আমার মনে হয়না সেগুলো খুব নিরাপদ! কারন আঘাত লাগার সময় উপরের অংশ খুলেও যেতে পারে। 

হেলমেট সম্পর্কে জানলেন। এখন প্রয়োজনমত অবশ্যই একটা কিনে ফেলুন। কেনার আগে dot/snell এর অনুমোদন আছে কিনা দেখে নিন-(না থাকলে বিরাট অসুবিধা তা নয়)। দোকানেই হেলমেটটি পরে দেখুন সামনের প্লাস্টিকটি যথেষ্ঠ পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছেন কিনা? অবশ্যই স্বচ্ছ প্লাস্টিক কিনা দেখে নেবেন। নইলে বাইক চালাতে অসুবিধা। লক্ষ্য রাখুন ভিসরটি যেন স্ক্র্যাচ প্রুফ হয়। নইলে রাতে বেশ সমস্যা হবে। 

রাইডিং গ্লাভ্স 

বাইক চালানোর রাইডিং গ্লাভ্স আরেকটি প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট। পড়ে যাওয়ার সময় আমরা স্বভাবত:ই হাত ব্যবহার করে পতন আটকানোর চেষ্টা করি। আমি নিজেই যখন প্রথম মোটরসাইকেল কিনেছিলাম তখন একটা এ্যাকসিডেন্টে আমার বাম হাত ভেঙ্গে যায়! মার্শাল আর্টের ব্রেকফল ও কাজে লাগানোর সুযোগ পাইনি। বাসায় রাইডিং গ্লাভস ছিল; কিন্তু পরা হয়নি। ফলশ্রুতিতে একগাদা ছোট ছোট পাথর ও ইট তালুর মধ্যে ঢুকে যায়। সেগুলো হাসপাতালে যখন বের করছিল তখন বুঝেছিলাম গ্লাভ্স না পরার শাস্তি। এত দ্রুত সব ঘটে যায় যে আপনি ইচ্ছেমত আছাড় খাবেন তার উপায় নেই। তাই অবশ্যই রাইডিং গ্লাভস পরবেন। রাইডিং গ্লাভ্স চামড়ার হলে ভালো হয়। দেখতে নিচে দেওয়া গ্লাভসের ছবির মত যেন হয়। তবে গ্লাভস এমন হবে যাতে আপনি সহজেই ব্রেক, ক্লাচ চাপতে পারেন।

জুতো

জুতো অবশ্যই পরবেন। বুট টাইপের জুতো হলে খুবই ভালো; নইলে কমপক্ষে চামড়ার জুতো পরুন। (সাবধান-গ্যাস পাইপ বা সাইলেন্সার প্রচন্ড গরম থাকে। সেখানে কোন ভাবে খালি পা ছুঁয়ে ফেললে আর রক্ষে থাকবেনা।) কেড্স এখানে খুব একটা কাজে আসবেনা। তবে স্যান্ডেল পরার চেয়ে ভালো।

পোষাক

উজ্জ্বল রঙ যেমন হলুদ, কমলা, সাদা রঙের পোশাক পরুন যাতে বেশ দুর থেকেই অন্যান্য যানবাহনের ড্রাইভার আপনাকে দেখতে পায়। শীত হলে জ্যাকেট পরুন। গরমে ফুলহাতা মোটা জিন্স জাতীয় শার্ট পরুন। সব ঋতুর জন্যেই জিন্স বেশ আরাম দায়ক। এটা ছিলে যাওয়া থেকে অন্যান্য কাপড়ের থেকে বেশি সুরক্ষা দেয়। সুতরাং জিন্স এর পোশাক ব্যবহার করা ভালো। তবে জিন্স সুরক্ষার জন্য পারফেক্ট বলা যাবেনা-অন্যান্য কাপড়ের চেয়ে ভাল; এ’টুকু বলা যায়। সবচেয়ে ভাল লেদার প্যান্ট এবং লেদার জ্যাকেট। কিন্তু এগুলোর দাম বেশী; আর গরমে পরা অসম্ভব। 


03/  

এই অধ্যায়ে আমরা আলোচনা করব কিভাবে মোটরসাইকেল সঠিকভাবে চালাতে হয়। হাতে কলমে অভ্যেস না করলে এই অধ্যায় মুখস্থ করে ফেললেও আপনার কোন লাভ হবেনা। মোটর সাইকেল অবশ্যই যিনি চালাতে জানেন এমন কারো কাছে শেখা উচিত। বিশেষ করে মূল বিষয়গুলো। প্রথমে যে মোটর সাইকেলটি চালাবেন তার সমস্ত কন্ট্রোল সম্পর্কে জেনে নিন। গিয়ার শিফ্ট কি করে করতে হয়, কি করে ব্রেক কষতে হয়, সিগন্যাল, হেড লাইট ও হর্নের সুইচ কোথায়, ইঞ্জিন কীল/কাট অফ্ সুইচ কোথায় ইত্যাদি। আপনার রিয়ার ভিউ মিরর রাস্তার সাথে অ্যাডজাস্ট করে নিন। প্রথম দিন মোটর সাইকেল চালাতে হলে এমন জায়গা বেছে নেওয়া উচিত যা হবে নিরিবিলি অথচ পাকা রাস্তা। অনেকে মাঠে শেখার জন্য বলেন, কিন্তু মাঠের একটা মুশকিল হলো ঘাস ভেজা হলে (বিশেষ করে শীত-বর্ষাকালে) স্লিপ করে পড়ে যাওয়ার একটা সম্ভবনা থাকে। তবে অন্য কোন ভাল জায়গা না পেলে মাঠেই শেখা উচিত।
  • 1. প্রয়োজনীয় পোশাক পরে নিন।
  • 2. আপনার বাইকার বন্ধুকে সাথে নিন।
  • 3. মোটরসাইকেলের সমস্ত কন্ট্রোল সম্পর্কে জেনে নিন:- 


জেনে নিন কোথায় কোন সুইচ আছে এবং সেগুলো কাজ করে কিনা; থ্রটল, ক্লাচ, ব্রেক, হর্ন, টার্ন সিগন্যাল, হেড লাইট সুইচ, হাই-লো বীম সুইচ, ব্রেক লাইট, টায়ার, টায়ারের এয়ার প্রেসার, ফুয়েল সাপ্লাই ভালভ, ইঞ্জিন অয়েল লেভেল, ব্রেক অয়েল লেভেল এবং ইঞ্জিন কাট অফ সুইচ (সব মোটর সাইকেলে এটি থাকেনা।)। টায়ারের প্রয়োজনীয় এয়ার প্রেসার চেক করুন। 



পিঠ সোজা করে বসুন। আপনার ঘাড় থাকবে সোজা। সোজা সামনে তাকান যাতে আপনি পুরো রাস্তা দেখতে পান। বাইকের সীটের এমন স্থানে বসুন যেখান থেকে সহজেই আপনি স্টিয়ারিং হ্যান্ডেল কন্ট্রোল করতে পারেন। অনেকেই সীটের শেষ মাথায় বসেন। এটাতে হ্যান্ডেল ধরতে একটু অসুবিধা হয়। হ্যান্ডেল ধরা অবস্থায় আপনার কনুই থাকবে সামান্য বাঁকা। বেশ শক্ত করে হ্যান্ডেল বার ধরে থাকবেন নইলে রাস্তা খারাপ থাকলে চট করে হ্যান্ডেল হাত থেকে ছুটে যেতে পারে। আপনার ডান হাত দিয়ে থ্রটল এমন ভাবে ধরুন যাতে আপনার তালুর নিচের অংশ সামনের টায়ারের দিক নির্দেশ করে। এতে করে আপনার থ্রটল বেশি ঘুরে যাওয়া থেকে রক্ষা পাবে। ছবি দেখুন:- 



সঠিক নিয়ম (বামে) ভুল নিয়ম (ডানে)
আপনার হাঁটু তেলের ট্যাংকের সাথে লাগিয়ে রাখুন। এতে বাইক কন্ট্রোল সহজ হবে। আপনার পা ঠিকমত ফুট পেগসে রাখুন। অনেকে পায়ের সামনের অংশ ঝুলিয়ে নেন-যা বিপদজনক।
  • 1. এখন ইঞ্জিন কীল সুইচ অফ করে নিন। সমস্ত সিগন্যাল লাইট অফ করে নিন। বাইক নিউট্রাল আছে কিনা ইন্ডিকেটর চেক করুন। কীক স্ট্যান্ড ওঠানো আছে কিনা দেখে নিন। আপনার ইঞ্জিন ঠান্ডা থাকলে সহজে স্টার্ট নাও হতে পারে। ইঞ্জিন স্টার্টের আগে চোক অন করে নিলে ইঞ্জিন স্টার্ট করতে সহজ হয়। (এই সুইচটি সাধারনত: ক্লাচ এর কাছাকাছি থাকে অথবা, নীচে ইঞ্জিনের পিছনে থাকে।) চোকের সাধারনত: দুইটা ধাপ থাকে-প্রথমে সম্পূর্ন চোক অন করে ইঞ্জিন স্টার্ট করুন; ১ মিনিট পর চোক সুইচ মাঝ বরবার নিয়ে আসুন। ৪/৫ মিনিট ইঞ্জিনকে গরম হতে দিন। এরপর চোক অফ করে দিন। ইঞ্জিন গরম থাকলে চোক সুইচ অন না করলেও চলে। ইঞ্জিন স্টার্টের জন্য কিক স্টার্ট করাই ভালো। তাহলে আপনার ব্যাটারী খরচ কম হবে। (বিশেষ করে ইঞ্জিন যখন ঠান্ডা থাকবে।) ইঞ্জিন স্টার্ট এর সময় খেয়াল রাখুন আপনার গিয়ার পজিশন নিউট্রালে আছে। নইলে আপনার বাইক ছোট্ট লাফ দিতে পারে এবং সেইসাথে ইঞ্জিনের ক্ষতি হতে পারে।
  • 2. হ্যান্ডেলের বাম পাশের লিভারটির নাম ক্লাচ। ক্লাচ এর কাজ হচ্ছে ইঞ্জিন থেকে গিয়ারের অংশকে আলাদা করা। অর্থাৎ ক্লাচ চেপে ধরলে ইঞ্জিনের কোন শক্তিই থাকেনা আর ক্লাচ ছেড়ে দিলে গিয়ার এ ইঞ্জিনের শক্তির সংযুক্তি ঘটে।
ক্লাচ দু’ভাবে ধরা যায়। ছবিতে দেখুন দুই আংগুল বা চার আংগুল ব্যবহার করা হয়েছে। যেটাতে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন সেভাবেই ধরুন।


ক্লাচ লিভার সম্পূর্ন চেপে ধরে গিয়ার পরিবর্তন করুন। উল্লেখ্য যে, স্পোর্টস বাইক গুলোতে দু’ আঙ্গুল ব্যবহার করে ক্লাচ ব্যবহার করা যায়। কিন্তু আমরা সাধারনত: যে সব বাইক চালিয়ে থাকি সেগুলোতে চার আংগুল ব্যবহার করে ফুল ক্লাচ করতে হয়। গিয়ার ফাংশন এক এক মোটর সাইকেল এক এক রকম। কোনটা সামনে বা নিচে চেপে গিয়ার এনগেজ্ড করা হয়, পিছনে চেপে বা উপরে উঠিয়ে নিউট্রাল; আবার কোনটা সামনে বা নিচে চেপে নিউট্রাল, পিছনে বা উপরে উঠিয়ে গিয়ার এনগেজ্ড করা হয়। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে এক মোটরসাইকেলেই দুই নিয়মে গিয়ার শিফ্ট হয়। এখানে ছবি দেখুন দুই ধরনের গিয়ার লিভার দেখানো হয়েছে:- 


আপনার মোটর সাইকেল এখন First Gearআছে। এবার ধীরে ধীরে ক্লাচ ছাড়ুন এবং ধীরে ধীরে থ্রটল/অ্যাক্সিলেটর দিন। এখন আপনার বাইক চলতে শুরু করছে। আপনার দৃষ্টি থাকবে সোজা রাস্তার দিকে। First Gearসাধারনত: উঁচু জায়গাতে ওঠার জন্য ব্যবহার করা হয়। এই গিয়ারে বাইকের শক্তি বেশি থাকে কিন্তু গতি থাকে একদম কম। ক্লাচ অল্প ছেড়ে থ্রটল বাড়িয়ে কি করে আস্তে আস্তে বাইক চালানো যায় তা বার বার প্র্যাকটিস করে বুঝে নিন। আসলে ক্লাচ যতটা না ইঞ্জিন অন-অফ সুইচ তার চাইতে বেশি রেগুলেটর সুইচ । আমরা ফ্যানকে যেমন রেগুলেটর ঘুরিয়ে কন্ট্রোল করতে পারি; তেমনি ক্লাচ অল্প বা বেশি চেপে আমরা ইঞ্জিনের গতি কে কন্ট্রোল করতে পারি। এটা বেশ কয়েকদিন প্র্যাকটিস করলেই আয়ত্তে এসে যাবে।
First Gear থেকে এবার second gear দিতে শিখবো। থ্রটল বাড়িয়ে বাইকের স্পিড তুলুন। তারপর থ্রটল সম্পূর্ন কমিয়ে দিয়ে ক্লাচ সম্পূর্ন চেপে second gear দিন। এবারও ধীরে ধীরে ক্লাচ ছাড়ুন এবং ধীরে ধীরে থ্রটল/অ্যাক্সিলারেট করুন। second gear এ মোটর সাইকেলের গতি খুব কম থাকে। সুতরাং এই গিয়ার ট্রাফিক জ্যামের মধ্যে চালানোর জন্য ভাল। second gear এ third gear নিয়ম আগের মতই। গতির সাথে সমন্বয় করে গিয়ার শিফট করুন। তবে নতুনদের জন্য টপ গিয়ার ব্যবহার করার দরকার নেই। third gear দিয়ে বাইকের গতি ২০/৩০ কি:মি: এর মধ্যে রেখে চালানো অভ্যেস করুন।

ব্রেকিং:-

‘‘ব্রেক করলেই তো থামবে, এতে আর শেখার কি আছে।’’ ব্রেকিং-টা খুব সহজ বিষয় নয়; বহুবার প্র্যাকটিস ছাড়া এটি আয়ত্ত্ব করা সত্যিই কঠিন। মোটরসাইকেল থামাতে চাইলে আপনার গতি যদি ঘন্টায় ৪৮ কি:মি: গতিতে থাকে; তাহলে যেখানে থামতে চান সেখান থেকে ৩০ ফুট দূরত্ব বাকি থাকতে ব্রেক চাপতে হবে। আপনার গতি যদি ঘন্টায় ৯৬ কি:মি: গতিতে থাকে; তাহলে যেখানে থামতে চান সেখান থেকে ১২০ ফুট দূরত্ব বাকি থাকতে ব্রেক চাপতে হবে। আপনার গতি যদি ঘন্টায় ১৯০ কি:মি: গতিতে থাকে তাহলে ব্রেক চাপতে হবে- যেখানে থামতে চান ৪৮০ ফুট দূরত্ব বাকি থাকতে । আমাদের দেশে যদিও এত জোরে চালানোর সুযোগ নেই। কিন্তু হিসাবটা হচ্ছে এই- আপনার বাইক যত জোরে চলবে বস্ত্ত থেকে তত দুরে থাকতে ব্রেক কষতে হবে। মোটর সাইকেলের গতি মাপা গেলেও বস্ত্তর দূরত্ব নির্ণয় করা কঠিন। সে’জন্য ফাঁকা রাস্তায় কোন কিছুকে টার্গেট করে বাইক থামানো প্র্যাকটিস করুন। কেননা আপনার মোটরসাইকেল ডিস্ক ব্রেক না ড্রাম ব্রেক তার উপরও থামানোর নিয়ম নির্ভর করে। আপনার মোটর সাইকেল ম্যানুয়ালে লেখা আছে সঠিক ব্রেকিং টাইম। বাইকের গতি কমাতে চাইলে অনেক সময় থ্রটল কমিয়ে দিলেই কাজ হয় অর্থাৎ ইঞ্জিনই ব্রেকের কাজ করে। তবে যদি ব্রেক করতেই চান তাহলে সম্পূর্ন ক্লাচ চেপে সামনের ব্রেক ও পিছনের ব্রেক ধীরে ধীরে চাপতে হবে। এই পদ্ধতি সাধারণ অবস্থার জন্য প্রযোজ্য। মোটর সাইকেল থামানোর জন্য সামনের ব্রেকই বেশী কার্যকর। কারন ব্রেকিং এর সময় আপনার ওজন সামনের দিকে ট্রান্সফার হয়। সামনেরটা চেপে ধরার পরপরই পিছনেরটা চাপতে হবে। তাহলে বাইকের ব্যালান্স ঠিক থাকবে। “Release the front brake even slower than you squeeze it on.”
‘‘সামনের ব্রেক ধরার চাইতে ছাড়ার সময় আরও আস্তে আস্তে ছাড়ুন।’’ এতে আপনার শরীরের ওজন দুই চাকাতেই সমান ভাবে ভাগ হয়ে যাবে। মোটর সাইকেল ঠিকভাবে থামানোটা খুবই জরুরী। কিন্তু সত্যিকার অর্থে প্র্যাকটিস ছাড়া স্পিডের উপর বাইক থামানো বেশ কঠিন কাজ। সামনের ব্রেকে আছে ৭০% বাইক থামানোর ক্ষমতা। অনেক এক্সপার্ট পিছনের ব্রেককে পাত্তায় দেননা। তারা ‘‘ব্রেকী’’ জানেন। কিন্তু আপনি দুটো ব্রেকই ব্যবহার করুন। গতির উপর হঠাৎ এই ব্রেক কষলে বাইক স্লিপ করে পড়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভবনা। খুব দ্রুত মোটর সাইকেল থামাতে চাইলে ক্লাচ সম্পূর্ন চেপে ধরে সামনের ব্রেক চেপে তারপর পিছনের ব্রেক চাপতে হবে। এটা কোন ফাঁকা রাস্তায় বহুবার প্র্যাকটিস করুন। হঠাৎ স্পিডের মধ্যে ব্রেকের প্রয়োজন হলে এটা খুব কাজে দেবে। সুতরাং ভালমত প্র্যাকটিস করে এক্সপার্ট হয়ে নিন।
অথবা সামনের ব্রেক চেপে ধরে আবার ছেড়ে দিয়ে আবার ধরুন। তাহলেই ব্যালান্স ঠিক হয়ে যাবে। সবগুলো কাজই বহু প্র্যাকটিস দরকার। যেখানে তীক্ষ্ম বাঁক, ভেজা রাস্তা, কাদা বা তেলতেলে রাস্তায় সেখানে সামনের ব্রেকের চাইতে পিছনের ব্রেক চেপে সামনেরটা চাপতে হবে। ক্রুজার টাইপ মোটরসাইকেলে পিছনের ব্রেক ভালো কাজ করে। হঠাৎ করে খুব জোরে ব্রেক কষবেননা।

ইমারজেন্সি ব্রেকিং:

মাঝে মাঝে এমন পরিস্থিতি আসে যেখানে আপনার সাথে সাথে থেমে যাওয়া প্রয়োজন হয়। এখানে কিছু টিপস দেওয়া হলো।
  • একসাথে দুটো ব্রেক যথেষ্ঠ জোরে চাপুন। হ্যান্ডেল সোজা ও শক্ত করে ধরে রাখুন-নইলে বাইক স্কিড করতে পারে। সোজা স্কিড করলে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকবেনা।
  • আপনার দৃষ্টি থাকবে সোজা সামনের দিকে। টায়ারের দিকে তাকিয়ে থাকবেননা।
  • সামনের ব্রেক একবার ধরে তখনই ছেড়ে আবার ধরুন। এতে আপনার শরীরের সাথে বাইকের ভারসাম্য ঠিক থাকবে। তবে পিছনের ব্রেক মোটরসাইকেল না থামা পর্যন্ত একবার কষলে তা ধরেই রাখবেন। সামনের ব্রেকের মত করবেননা।
  • বাঁক নেওয়ার সময় ব্রেক করা মোটেই উচিত নয়। এতে পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। কিন্তু যদি পরিস্থিতি এমন যে আপনাকে ব্রেক করতেই হবে তাহলে হার্ড ব্রেক করবেননা। ধীরে ধীরে দুটো ব্রেক কষবেন।
মনে রাখবেন, নিরাপত্তার জন্য খুব আস্তে চালানো নিরাপদ নয়!! ঘন্টায় ১৫ কি:মি: চালানোর চেয়ে ঘন্টায় ৪০ কি:মি: চালানো অনেক সুবিধাজনক!! 
04/  

টার্নিং:-


বাঁক ঘুরতে চাইলে বেশ কিছু নিয়ম আপনার জানা প্রয়োজন। নিচের ছবি দুটো দেখুন। প্রথম ছবিতে চালক ও মোটরসাইকেল দুটোই কাত হয়ে আছেন। পরেরটি শুধু মোটরসাইকেল কাত হয়ে আছে। কিন্তু চালক সোজা হয়ে আছেন। এটা করতে হয়ে যখন আপনার মোটরসাইকেল আস্তে চলবে ও রাস্তাটি হবে অল্প বাঁকের- তখন শুধু মোটর সাইকেল কাত করলেই চলে; আপনার শরীর সোজা রাখা তখন জরুরী। 


১নং ছবি: দ্রুতগতিতে টার্ন নেওয়ার নিয়ম ২নং ছবি: ধীরে চলার সময় টার্ণ নেওয়ার নিয়ম
এগুলো আপনার ফাঁকা রাস্তায় প্র্যাকটিসের প্রয়োজন হবে। প্রথমে দেখে নিন পিছনে বা সামনে থেকে যানবাহন আসছে কিনা তারপর এই নিয়ম গুলো মেনে চলুন তাহলে দেখবেন নির্বিঘ্নে বাঁকটি পেরিয়ে যেতে পারবেন।
  • ক) গতি কমান (২৫/৩৫ কি:মি:)
  • খ) যেদিকে যেতে চান সেদিকে তাকান (দুরে তাকান; সামনের চাকার কয়েক ফুট সামনে নয়!!)
  • গ) কাউন্টার স্টিয়ারিং! যেদিকে ঘুরবেন তার বিপরীতে হ্যান্ডেল বারে পুশ করতে হয়ে বলে একে বলে কাউন্টার স্টিয়ারিং। এটা শুনতে অদ্ভুত কিন্তু অনেকেই এটি নিজের অজান্তেই হয়তো করে থাকেন। ডানে যেতে চাইলে ডান হাত সামান্য সামনে ঠেলতে হবে। বাম হাত সামান্য টানতে হবে। অনুরুপভাবে বামে যেতে চাইলে বামহাতে হ্যান্ডেল সামান্য সামনে ঠেলতে হবে এবং ডানহাতে সামান্য নিজের দিকে টানতে হবে। তবে যেহেতু বিষয়টি বহু প্র্যাকটিসের প্রয়োজন সেহেতু আপনি যেদিকে যেতে চান সেদিকেই হ্যান্ডেল বার ঘোরান। যখন খুব ভাল চালাতে শিখবেন তখন এটা প্র্যাকটিস করুন। খুব স্পিডে ঘুরতে চাইলে কাউন্টার স্টিয়ারিং জানা অবশ্যই প্রয়োজন।
  • ঘ) লীন (প্রয়োজন অনুয়ায়ী কাত হওয়া।)।
অনেকেই জানেননা যে, বাঁক ঘোরার সময় যদি প্রয়োজন মত কাত না হতে পারেন; তাহলে পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা অনেক বেড়ে যায় (৯৯.৯%!!)। যে কোন বাঁক ঘুরতে চাইলেই আপনাকে কাত হতেই হবে। অল্প বাঁক হলে মোটরসাইকেল কাত করে নিজে সোজা থাকলেও চলে। সামনে বাঁক দেখলে আপনার বাইকের গতি ঘন্টায় ২০/২৫ কি:মি: এর মধ্যে নিয়ে আসুন। বাঁক ঘুরতে চাইলে যে দিকে রাস্তা চলে গেছে সেই দিকে তাকান। মাথা ঘুরিয়ে তাকিয়ে থাকলেই হবে। কাঁধ ঘুরাবেন না। আপনার তাকানোর উপর নির্ভর করছে কতখানি কাত হওয়া প্রয়োজন।
অবশ্যই জোর করে সোজা থাকার চেষ্টা করবেননা। মোটর সাইকেল যতখানি কাত হওয়া প্রয়োজন-ঠিক ততখানিই কাত হয়ে যাবে আপনার তাকানোর উপর নির্ভর করে। নিচের ছবি গুলো দেখলেই বুঝবেন। এসময় থ্রটল কমাবেননা বা ব্রেক কষবেননা; যে গতি আছে সেটাই ধরে রাখুন (অথবা সামান্য বাড়ালেও ক্ষতি নেই-বরং লাভ।) তাহলে প্রয়োজনমত আপনার বাইক কাত হয়ে বাঁকের অংশটুকু পার হয়ে যাবে।
আপনার বাইকের গতি যদি বেশি হয় এবং আর যদি বাঁকটি তীক্ষ্ম হয়- আপনাকে বেশি কাত হতে হবে। আপনার শরীর ও বাইক একসাথে কাত হবে, দৃষ্টি থাকবে দুরে রাস্তার দিকে। কাছে তাকালে কাত হতে সমস্যা হবে। আপনার তাকানোর উপর নির্ভর করছে কোন রাস্তায় কতখানি কাত হওয়া প্রয়োজন। ছবি দেখলে ব্যাপারটা আরও পরিষ্কার হবে। 

ছবিতে দেখুন- সামনে না দেখে বাঁক ঘোরার সময় রাস্তা যেদিকে গেছে সেদিকে তাকাচ্ছেন মোটর সাইক্লিস্ট
লক্ষ্য করুন উপরের ছবিতে মোটর সাইক্লিস্টদের হাঁটু মেঝেতে স্পর্শ করছে। আপনি এগুলো কখনও করবেননা। প্রচন্ড স্পিড আর তীক্ষ্ম বাঁকের জন্য তাদেরকে এত কাত হতে হয়; আপনার সামান্য কাত হলেই চলবে।

Swerve:

চট করে বাঁক নিয়ে কোন যানবাহনের সাথে ধাক্কা থেকে বেঁচে যাওয়া ইংরেজীতে বলে সয়ার্ভ। টার্ন নেওয়া আর সয়ার্ভ এর মধ্যে বেশ পার্থক্য আছে। টার্ন নিতে চাইলে যথেষ্ঠ সময় পাওয়া যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে সময় এবং ফাঁকা জায়গা খুব অল্প পাওয়া যায়। সিদ্ধান্ত নিতে হয় দ্রুত। মাঝে মাঝে পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যখন দুটো ব্রেক একসাথে ব্যবহার করেও সামনের যানবাহন বা অন্যকিছুর সাথে ধাক্কা লেগে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচা যায়না। এরকম অবস্থায় সয়ার্ভিং ছাড়া বাঁচার পথ থাকেনা। ধরা যাক, সোজা যাচ্ছিলেন হঠাৎ পাশের রাস্তা থেকে একটা সাইকেলওয়ালা সামনে এসে পড়ল। এতটাই কাছে যে ব্রেক চেপে শুধু কাজ হবেনা-এমন অবস্থা। এ অবস্থায় সয়ার্ভ প্রয়োজন। যেদিক দিয়ে আপনি বেরিয়ে যেতে চান সেদিকে সামান্য হ্যান্ডেল ঘোরান। এতে মোটরসাইকেল চট করে কাত হয়ে যাবে। যত বেশি তীক্ষ্ণ বাঁক নিবেন, তত কাত হতে হবে। আপনার শরীর থাকবে সোজা, হাঁটু লেগে থাকবে তেলের ট্যাংকের সাথে, পায়ের পাতা শক্ত ভাবে থাকবে ফুট রেস্টে। আপনি যেদিক দিয়ে বেরিয়ে যেতে চান-আপনার দৃষ্টি থাকবে সেদিকে। এখানেও কাউন্টার স্টিয়ারিং করবেন যাতে প্রয়োজনীয় কাত হতে পারেন-এরপর আবার অন্য হাত ব্যালান্স ঠিক করবেন। 
কখনই সয়ার্ভিং অবস্থায় ব্রেক করবেননা। ব্রেক করতে চাইলে সয়ার্ভিং এর আগে বা পরে করুন। নইলে আছাড় অবশ্যম্ভাবী।
নিচে দেওয়া দুটো ছবি দেখুন। প্রথম ছবিতে দেখা যাচ্ছে রাস্তার পাশ থেকে একটা কার হঠাৎ এসে পড়েছে। এ’অবস্থায় সয়ার্ভিং করে স্যাৎ করে বেরিয়ে মোটর সাইকেল সোজা হলে তারপর ব্রেক করা হয়েছে। দ্বিতীয় ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে, চলন্ত গাড়ী থেকে বেশ কিছু ইট পড়ছে। এ’রকম ক্ষেত্রে প্রথমে ব্রেক চেপে তারপর সয়ার্ভ করা হয়েছে। একবার বলেছি আবারও বলছি সয়ার্ভিং অবস্থায় ব্রেক করবেননা। 

ছবি(১) সয়ার্ভ, তারপর ব্রেক করুন। ছবি (২) ব্রেক, তারপর সয়ার্ভ করুন
রাস্তায় পরিস্থিতির পরিবর্তন হতেই থাকে। একজন দায়িত্ববান রাইডার হিসেবে আপনার টাইমিং এবং প্রয়োজনীয় দূরত্ব সম্পর্কে ভালমত জানা প্রয়োজন। যথেষ্ঠ প্রস্ত্ততি থাকলে মোটরসাইক্লিং খুবই আনন্দদায়ক। মেইন রোডে এমন লেন বাছাই করুন যাতে অন্য ড্রাইভার সহজেই আপনাকে দেখতে পায়। মোটরসাইকেল সাইজে ছোট এবং এর গতি ও বেশি সুতরাং একে হঠাৎ রাস্তায় উদয় হতে দেখলে অন্য ড্রাইভারদের ভুল হওয়ায় স্বাভাবিক। তাছাড়া কার বা ট্রাক মোটরসাইকেলকে আঘাত করলে তাদের ব্যথা পাওয়ার কোন সম্ভবনা থাকেনা বলে মোটরসাইকেলকে তারা খুব একটা কেয়ার করেনা। তারপরও কোন ড্রাইভার চায়না ইচ্ছে করে কাউকে ধাক্কা দিতে। তারা যেন সহজেই আপনাকে দেখতে পায় সে জন্যে -উজ্জ্বল রঙের পোশাক পরুন।
  • -দিনের বেলায় হেড লাইট বা পার্কি লাইট জ্বালিয়ে রাখতে পারেন।
  • -টার্ন নিতে চাইলে সিগন্যাল দিন এবং টার্ন নেওয়া হলে অবশ্যই সিগন্যাল লাইট অফ করুন। নইলে অন্য ড্রাইভার ভুল বুঝে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।
  • -থামতে চাইলে কয়েকবার হালকা ব্রেক কষে ব্রেক লাইট ফ্ল্যাশ (এমারজেন্সি ব্রেক ছাড়া) করুন। তাহলে পিছনের যানবাহন আপনার ব্রেক লাইট দেখে সাবধান হবে। দুই তিনবারে ব্রেক করতে বলছি এ’জন্যে যে একটা স্থির লাইটের চাইতে একটি ফ্ল্যাশিং লাইট বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করে।
  • -হর্ণ ব্যবহার করে তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেন। তবে এর উপর বেশি ভরসা করতে যাবেন না। হর্ণকে খুব একটা পাত্তা দেননা তারা (অন্যান্য ড্রাইভার)। যে কোন যানবাহনের খুব কাছে যাবার চেষ্টা করবেননা। অন্য বস্ত্ত থেকে আপনার দূরত্ব যত বেশি হবে; তত বেশি আপনি নিরাপদ থাকবেন। আপনি ভুল না করলেও অন্য ড্রাইভার ভুল করতেও পারে।
  • নিরাপদ দূরত্বে থেকে বাইক চালানোর চেষ্টা করুন। ট্রাকের মত যানবাহন বাতাসের ধাক্কাতেও আপনার ব্যালান্স নষ্ট করে দিতে পারে। রাস্তার এমন একটি দিক বেছে নিন যেখান থেকে আপনি পুরো রাস্তা র দিকে নজর দিতে পারেন এবং আপনাকেও অন্য ড্রাইভার সহজে দেখতে পায়। বাজে রাস্তা অ্যাভয়েড করুন।
  • কোন যানবাহন আপনাকে অতিক্রম করার সময় যানবাহনের দিকে না তাকিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে বাইক চালান। আপনি যেদিকে তাকাবেন সাধারনত: সেদিকে আপনার বাইক যেতে চাইবে।

মানসিক প্রস্ত্ততি:

আপনার নিরাপত্তা হাত ও পায়ের চেয়ে চোখ ও মনের উপর বেশি নির্ভরশীল! এখানে বিশেষজ্ঞরা একটা ছোট্ট ফর্মূলা দিয়েছেন। এটি হচ্ছে নিরাপদ মোটর সাইকেল চালানোর মানসিক প্রস্ত্ততি।ফর্মূলাটা হচ্ছে SEE. S = Search, E =Evaluate, E = Execute.ফর্মূলার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিচ্ছি। মেনে চললে সত্যি উপকৃত হবেন।
Searchসাম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে ভালমত রাস্তাকে পরীক্ষা করুন। এটা আপনার প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সুবিধা হবে। রিয়ার ভিউ মিরর-এ বারবার পরীক্ষা করুন। অনেক সময় কোন কোন যানবাহন আপনার পিছনে এমন এক পজিশনে থাকে; যা আয়নায় দেখা যায়না। এটাকে ইংরেজীতে বলা হয় Blind Spot.সুতরাং আয়নায় দেখা যাচ্ছেনা মানে পিছন ফাঁকা-তা নয়। ছবিতে দেখুন। গাড়ীটি আপনার পিছনে থাকলেও আয়নায় তা দেখা যাচ্ছেনা। সাদা অংশ গুলো Blind Spot Area. 



Evaluateহিসাব করে নিন কি ঘটতে পারে। ধরা যাক, রাস্তার পাশে দেখলেন কিছু বাচ্চা ছেলে ফুটবল বা ক্রিকেট খেলছে। আপনি জানেন- যে কোন সময় বল রাস্তায় আসতে পারে এবং সেটা ধরতে বাচ্চাগুলো রাস্তায় চলে আসতে পারে। ব্যাপারটা খেয়াল করলে অবচেতন মনেই আপনি আপনার বাইকের স্পিড কমিয়ে ফেলবেন। এক্ষেত্রে তিনটা ব্যাপার খেয়াল রাখবেন। ১) আপনার ক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা ২) আপনার মোটরসাইকেলের ক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা এবং ৩) রাস্তার অবস্থা। আপনার যদি চট করে টার্ন নেওয়ার বা ব্রেক করার ক্ষমতা না থেকে থাকে তাহলে আপনি রিস্ক নিতে কেন যাবেন? অথবা আপনি এক্সপার্ট কিন্তু আপনার মোটর সাইকেল তত নয় (সব মোটরসাইকেলের থেমে যাওয়া বা চট করে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা এক নয়); সেক্ষেত্রে যথেষ্ট সাবধান হতে হবে। এছাড়া টাইমিংটাও এখানে বিশাল ফ্যাক্টর।

Execute:


নিরাপদে মোটরসাইকেল চালাতে আপনার মাথা ঠান্ডা রাখাটা জরুরী। পরিস্থিতি বুঝে কাজ করতে হবে।ভাল রাইডাররা জানেন কখন গতি কমাতে হয় এবং কখন গতি আর কৌশলের সমন্বয়ে বিপদ থেকে বেরিয়ে আসতে হয়। হঠাৎ আতঙ্কিত হয়ে কিছু করে বসলে দূর্ঘটনার সম্ভবনা থাকে। কোন যানবাহনের একদম পিছনে থাকা ঠিক নয়। এমন জায়গায় থাকুন যাতে সে তার রিয়ারভিউ মিররে সহজেই আপনাকে দেখতে পায়। আপনার গতি যদি ঘন্টায় ৪০ কি: মি: এর নীচে হয় তাহলে দুই সেকেন্ড দূরত্বে থাকুন। দুই সেকেন্ড দূরত্ব বলতে বোঝায়, যখন কারটি কোন ইলেকট্রিক পোল পার হয়, তখন ‘‘বাংলাদেশ এক, বাংলাদেশ দুই’’ বলার পর যদি আপনিও ঐ ইলেকট্রিক পোল পার হোন তারমানে গাড়ীটি থেকে আপনি দুই সেকেন্ড দূরত্বে আছেন। 

গতির অনুপাতে দুই থেকে বারো সেকেন্ড দূরত্বে থাকার চেষ্টা করুন। 

05/

লেন পজিশন:-

রাস্তার কোন অংশ সবচেয়ে ভাল? যদি সম্ভব হয় রাস্তার মধ্যে দিয়ে চালান। রাস্তার মধ্যে থাকলে সুবিধা হচ্ছে রিয়ার ভিউ মিররে সহজেই আপনাকে দেখা যায়। তাছাড়া রাস্তার দু’পাশ থেকে হঠাৎ কেউ এসে পড়লে সাবধান হওয়ার জন্য সময় ও স্পেস দুটোই পাওয়া যায়। তবে যদি খুব ভিড় হয় তাহলে বাম দিক দিয়ে যাবেন। বিদেশে অবশ্য ডান দিক ধরে চলার নিয়ম।

ইন্টারসেকশন:

বেশির ভাগ দূর্ঘটনা ঘটে ইন্টারসেকশনে (আড়াআড়ি রাস্তা)। এটা নানা ভাবেই ঘটতে পারে। যখন আপনার সামনের গাড়ী বাম দিকে মোড় নেয় তখন সেটা খুব একটা হয়তো বিপদজনক নয়। কিন্তু ডান দিকের রাস্তায় মোড় নেওয়া গাড়ী প্রায় বিপদ সৃষ্টি করে। অথবা, ডান বা বাম দিকের রাস্তা থেকে উঠে আসা গাড়ী বা অন্য কিছু সবসময় বিপদজনক যদি তারা নিয়ম মত না আসে। আর আমাদের বাংলাদেশে রাস্তায় সবচেয়ে বেশি নিয়ম ভাঙ্গা হয়!! এই নিয়ম ভাঙ্গার খেলায় সবচেয়ে মূল্য দিতে হয় মোটরসাইক্লিস্টদের। অন্যান্য যে কোন যানবাহনের চাইতে মোটর সাইকেলে রিস্ক বেশি। ইন্টারসেকশনে আপনার SEEফর্মূলার সর্বোচ্চ প্রয়োগ প্রয়োজন। আড়াআড়ি রাস্তায় চারটা নিয়ম মনে রাখুন।
  • - পিছনের রাস্তা
  • - সামনের রাস্তা
  • - ডানের রাস্তা
  • - বামের রাস্তা
ডানে বা বামে মোড় নিতে চাইলে প্রথমে থেমে ট্রাফিক সিগন্যাল লাইট সবুজ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তবে আপনি মানলেও সবাই হয়তো ট্রাফিক সিগন্যাল মানেনা। মাথা এগিয়ে দেখে নিন ডানদিক বা বামদিক থেকে কিছু আসছে কিনা দেখে নিয়ে এগিয়ে যান। এসব ক্ষেত্রে ক্লাচ ও থ্রটলের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকা প্রয়োজন। ট্রাফিক স্টপেজে স্টার্ট বন্ধ করবেননা। মোটরসাইকেল ফার্স্ট গিয়ারে রেখে ক্লাচ চেপে অপেক্ষা করুন। 

কার্ভস: 



টার্নিং 

এ আমি আলোচনা করেছি কিভাবে টার্ন নিতে হয়। উপরের ছবি গুলো দেখলে বুঝবেন এই রকম রাস্তায় কত খানি জায়গা নিয়ে ঘোরা প্রয়োজন।Search করুন রাস্তাটির কত খানি ব্যাসার্ধ, রাস্তাটি শুকনো না ভেজা, অন্য কোন যানবাহন আছে কিনা ইত্যাদি। সব মূল্যায়ন করা হলে টার্নিং এর নিয়ম অনুযায়ী (গতি কমিয়ে তা ধরে রাখা/তাকানো/কাউন্টার স্টিয়ারিং/লীন) আপনার কাজ শেষ করুন। অবশ্যই মনে রাখবেন টার্নিং অবস্থায় গতি কমাবেননা বরং সামান্য বারাবেন এবং ব্রেক করবেননা।

ওভারটেকিং/পাসিং:

প্রায় ওভারটেকিং এর প্রয়োজন হয়। আপনি জানেন নিশ্চয়ই যত যানবাহন আছে তার মধ্যে মোটরসাইকেলে সবচেয়ে দ্রুত যাওয়ার অধিকার আছে (তাই বলে আপনাকে খুব জোরে চালাতে বলছিনা!)। জায়গা না পেলে ওভারটেক করবেননা। ভুলেও কখনও বাঁক ঘোরার মূহুর্তে বা যথেষ্ট ফাঁকা জায়গা না পেলে ওভারটেক করবেননা। কোন যানবাহনকে ওভার টেক করতে চাইলে যে কার বা বাসটিকে ওভার টেকিং করতে চান তার সামনে থেকে কোন যানবাহন আসলে ওভারটেক করতে যাবেননা। যানবাহনটির পিছনে দুই সেকেন্ড দূরত্বে থাকুন। এরপর আয়না ও মাথার সাহায্যে দেখে নিন আপনার পিছনে কোন যানবাহন আছে কিনা। নিরাপদ মনে হলে ডান দিক দিয়ে থ্রটল/এক্সিলেটর বাড়িয়ে গাড়ীটি পার হওয়ার দুই সেকেন্ড পর আবার নিজের লেনে ফিরে যান। ওভার টেকিং এর সময় স্পিড হঠাৎ কমাতে যাবেননা। বরং স্পিড একটু বেশি দিয়েই ক্রস করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। এ’সময় অবশ্যই টার্ন সিগন্যাল লাইট ব্যবহার করুন। ছবি দেখলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে। ১নং ছবিতে মোটরসাইকেল চালক ডান দিকের সিগনাল জেলে ডান দিকের লেনে গেছেন এরপর বাম দিকের সিগন্যাল লাইট জেলে ওভার টেক করেছেন। ওভারটেক শেষ হলে অবশ্যই সিগন্যাল লাইট বন্ধ করুন।
আপনাকে যখন কেউ ওভারটেক করবেন তখন কি করবেন? অথবা আপনাকে যখন গাড়ি ক্রস করবে তখন কি করবেন? কেউ সামনে যেতে চাইলে তাকে যাওয়ার সুযোগ দিন। গতি বারানোর প্রতিযোগিতায় যাবেন না। জীবনটা ‘‘নিড ফর স্পিড’’ গেম নয়। যে যেতে চায় যাকে ভালমত যাওয়ার সুযোগ দিন। চেষ্টা করুন আপনার ও অন্য যানবাহনের মধ্যে যেন যথেষ্ট ফাঁকা জায়গা থাকে। ফাঁকা জায়গা যথেষ্ঠ না থাকলে কয়েকবার হেডলাইট জালান। আধুনিক মোটরসাইকেলগুলোতে এই কাজের সুবিধার জন্য আলাদা সুইচ থাকে। জায়গার অভাবে অনেকে ডান দিকের সিগন্যাল লাইট জালান। কিন্তু এতে আনাড়ি ড্রাইভার হলে ভুল বুঝতে পারে; ভাববে আপনি ডানে যেতে চান এবং সে আরও বাম দিকে চলে আসে। যার ফলে মারাত্মক দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
হেড লাইট আগে জেলে আরেকটা সুবিধা পাওয়া যায়। সেটা হচ্ছে কোন বস্ত্তকে যদি আপনি আসন্ন যানবাহনের আগে পার হতে চান তাহলে আগে হেডলাইট জালান। আসন্ন যানবাহনের ড্রাইভার গতি কমিয়ে আপনাকে আগে সুযোগ করে দেবে। 

পাসিং Over taking

রাতে মোটরসাইকেল চালানো:

দিনের চাইতে রাতে বাইক চালানোতে রিস্ক বেশি। যেসব পোশাকে আলো প্রতিফলন করে সেই রকম পোশাক পরুন। যাতে অন্য ড্রাইভার আপনাকে সহজেই দেখতে পায়। সাধারনত: দিনের বেলায় যে গতিতে চালান; রাতে সেই দ্রুত গতি পরিহার করুন। রাস্তা ফাঁকা থাকলে আপনার হেডলাইট সবসময় ‘‘হাই’’ করে রাখুন। তবে অন্যদিক থেকে আসা যানবাহন হাই-লো সিগন্যাল দিলে বুঝবেন তার দেখতে অসুবিধা হচ্ছে। তখন আপনি লো করবেন। এক্ষেত্রে আপনার দেখতে অসুবিধা হলে হাই-লো করতে থাকুন। তাহলে অপরপক্ষ তার হেডলাইট ‘‘লো’’ করবে। তবে এই নিয়ম সব ড্রাইভার মানেনা। তাছাড়া অন্য গাড়ীর সাথে আপনার বাইকের মধ্যে যেন যথেষ্ঠ ফাঁকা জায়গা থাকে। আপনার হেলমেটের প্লাস্টিক যেন অাঁচড় বিহীন হয়। অাঁচড় আপনাকে ধোঁকা দিতে পারে। দুটো হেডলাইটকে চারটা দেখতে পারেন। যার ফলে আপনার সিদ্ধান্ত ভুল হতে পারে। রাতে দূরত্ব সম্পর্কেও ভাল ধারনা পাওয়া যায়না। আপনার সামনে car থাকলে তার পিছনে থাকলে বেশ লাভবান হবেন। তার আলো আপনাকে সাহায্য করবে। তবে ঐ গাড়ী থেকে আপনার দূরত্ব তিন সেকেন্ড বা তার বেশি হওয়া উচিত। কোন গাড়ী সামনে থেকে যখন আসবে তখন সরাসরি সেটার হেডলাইটের দিকে তাকাবেননা। নইলে কয়েক সেকেন্ড এর জন্য অন্ধ হয়ে যাবেন। আপনার হেড লাইটের আলো যেদিকে গেছে সেদিকে তাকিয়ে বাইক চালান।

স্কিড বা স্লিপ করা:

বাঁক নেওয়ার সময় স্কিড বা স্লিপ যাতে না হয় তার নিয়ম আমরা শিখেছি। কিন্তু তারপরও যদি আপনার বাইক স্কিড করতে পারে। তৈলাক্ত রাস্তা বা স্যান্ড থাকলে ব্রেক না করলেও স্কিড করার সম্ভবনা থাকে। আপনার মোটর সাইকেল যদি বেশ স্পিডে থাকে এবং বাঁক নেওয়ার জায়গাটুকুতে যদি স্যান্ড থাকে তাহলে আপনি চাকা যেদিকে স্কিড করছে হ্যান্ডেল সামান্য সেদিকে ঘোরান। এতে আপনার বাইক তার ব্যালান্স ফিরে পেতে পারে। তৈলাক্ত জায়গায় ব্রেক করার কারনে স্কিড করলে সামনের ব্রেক একবার ছেড়ে আবার মসৃনভাবে ব্রেক করুন। বাইক খুব স্পিডে না থাকলে আপনার পা মাটিতে নামিয়ে ব্যালান্স রক্ষার শেষ চেষ্টা করতে পারেন। লক্ষ্য রাখুন লিখেছি ‘‘শেষ চেষ্টা’’। কোন উপায় না থাকলেই শুধু পায়ের সাহায্যে নিবেন। এর আগের পরিচ্ছদ থেকে আপনি শিখেছেন বাঁক ঘুরতে চাইলে ঘোরার মুহূর্তে থ্রটল কমানো যাবেনা বরং সামান্য বারানো যেতে পারে। কথাটি ঠিক। তবে কোন কারণে স্কিড করলে এ' অবস্থায় থ্রটল বারাবেননা। একটি চলন্ত চাকার চাইতে থেমে থাকা চাকা নিয়ন্ত্রণ এসময় অনেক সহজ।

বাজে রাস্তা:

বাজে রাস্তা বিপদজনক। তবে নিয়ম মেনে চললে বিপদ অনেকটাই কমে যায়। রাস্তা হিসেবে কিভাবে চলতে হবে তা লিখছি। বৃষ্টিভেজা রাস্তা বৃষ্টি শুরুর প্রথম ১০ মিনিট খুব স্লিপারি হয়ে যায় কারন প্রথম দিকে রাস্তার তেল ও ময়লা পানির সাথে মিশে যায়। পরের দিকে রাস্তা অনেকটাই চলাচলের যোগ্য হয়ে ওঠে। বৃষ্টির মধ্যে চালাতে চাইলে আপনার সামনে যাওয়া কোন বাস, ট্রাক বা কারের বামদিকের চাকার দাগের ওপর দিয়ে চালালে পিছলে পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা অনেক কম থাকে। তবে অবশ্যই সামনের যানবাহন থেকে বৃষ্টির দিনে ১০ মিনিট দুরত্বে থাকুন। কারন এই সময় ব্রেকিং স্টপেজ কমে যায়। পানিতে ডুবে যাওয়া অপরিচিত রাস্তায় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করুন। পানির নিচে গর্ত, ইট ইত্যাদি থাকতে পারে যা আপনার ব্যালান্স নষ্ট করে দিতে পারে। ভাঙ্গা চোরা রাস্তায় স্যান্ড,পাথর, ধারালো বস্ত্ত ইত:স্তত ছড়িয়ে থাকে। সেগুলোর দিকে নজর রেখে বাইক চালান। আলকাতরা, তেল, কলার খোসা, ধান ইত্যাদিও খুব পেছল। এসবের উপর দিয়ে চলতে হলে ধীরে চলুন। হ্যান্ডেল শক্ত হাতে ধরে সোজা রাখার চেষ্টা করুন। বাজে রাস্তায় জোরে চালাবেননা। এটাই হচ্ছে মুল কথা। আর বাঁক নিবেন যখন খুবই সাবধান থাকুন।
নিচের ছবিটি দেখুন। রাস্তায় অনেক সময় এ’রকম বাধা পেরুতে হয়। এরকম বাধার ক্ষেত্রে যা করতে হবে সেগুলো হচ্ছে- 


  • ধীরে চালান।
  • মোটরসাইকেলটি সোজা রাখুন।
  • হ্যান্ডেল শক্ত করে ধরুন। ক্লাচ ও ব্রেক এ হাত রাখবার দরকার নেই।
  • ফুটরেস্টের উপর সামান্য দাঁড়িয়ে যান। আপনার হাঁটু ট্যাংকের সাথে লেগে থাকবে। এটা আপনাকে ঝাঁকুনি দিয়ে ফেলা দেওয়া থেকে রক্ষা করবে।
  • বস্ত্তটির সাথে কনটাক্ট হওয়ার আগমূহূর্তে থ্রটল সামান্য বারান। সামনের চাকা পার হবার পর পিছনের চাকার সময়ও থ্রটল আরেকটু বারাবেন কিন্তু কমাবেননা।
  • বস্ত্তটির পার হবার পর মোটর সাইকেল যখন স্বাভাবিক অবস্থায় আসবে শুধু তখনই সীটে বসবেন।

জীব জন্তু:

মনে রাখবেন, যে কোন বড় কিছুর সাথে ধাক্কা লেগে যাওয়ার চেয়ে ছোট কোন কিছুর সাথে ধাক্কা খাওয়া ভালো। একটা মুরগী বা ছাগলের বাচ্চা বাঁচাতে গিয়ে গাড়ী সাথে ধাক্কা লাগিয়ে দেওয়া অনেক বেশি বিপদজনক। তবে সবচেয়ে ভালো কাউকে ধাক্কা না লাগানো। কোন কোন বজ্জাত কুকুর মোটরসাইকেল দেখলেই তাড়া করে । কুকুরের ক্ষেত্রে গিয়ার কমিয়ে কাছে যান। এরপর থ্রটল হঠাৎ বাড়িয়ে দিয়ে তাকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যান। যেদিকে যেতে চান সেদিকে দৃষ্টি রাখুন। কখনও ভুলেও বাইক থেকে লাথি মারতে যাবেননা। এতে আছাড়ের সাথে কুকুরের কামড় খাওয়ারও সম্ভবনা থাকে। ছাগল,গরু,মোষের ক্ষেত্রে তাদেরকে প্রথমে রাস্তা পার হওয়ার সুযোগ দিন। কারন তারা হঠাৎ কখন দৌড় মারবে তা বলা মুশকিল। আরেকটা কথা, চেষ্টা করুন জীবজন্তুগুলোর পিছনের দিক দিয়ে বের হয়ে যেতে। জানেন তো- গরু,ছাগলের কোন ব্যাক গীয়ার থাকেনা!!

উচুঁ বা পাহাড়ী রাস্তা:

উঁচু রাস্তায় উঠতে চাইলে বাইকের গতির সাথে গিয়ারের সমন্বয় সাধন জরুরী। ফোর বা ফাইভ গিয়ারের বাইকে থার্ড গিয়ার ব্যবহার করতে পারেন। আরও বেশি খাড়া হলে সেকেন্ড বা ফার্স্ট গিয়ার ব্যবহার করতে পারেন। বিশেষ দক্ষতা ছাড়া পাহাড়ী রাস্তায় বাইক চালানো কঠিন। ব্রেক ও ক্লাচের উপর পূর্ন নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। নইলে বাইক পিছনে নেমে যেতে পারে। আপনার দুইপা থাকবে মাটিতে-এক পা রাখা যায় কিন্তু ব্যালান্স রাখাটা দুইপায়ে সুবিধা হয়। সামনের ব্রেক চেপে থাকবেন। থ্রটল বাড়িয়ে ক্লাচ আস্তে আস্তে ছাড়তে থাকুন সেই সাথে সামনের ব্রেকও ছাড়তে থাকুন। যখন উপর দিকে ওঠা শুরু করবে শুধু তখনই দুইপা ফুট রেস্টে নিয়ে আসবেন। পাহাড়ী রাস্তায় সাধারন রাস্তার চাইতে থ্রটল বেশি ঘোরাতে হয়।

প্যাসেঞ্জার বহন:

মোটরসাইকেলের পিছনে কোন সুন্দরীকে নিয়ে ঘুরতে কার না ভালো লাগে? তবে সেই সুন্দরী যদি আমাদের দেশের নায়িকাদের মত মোটা হন তাহলে বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। পিছনে প্যাসেঞ্জার বা অন্য কোন মাল নিলে মোটরসাইকেলের পারফরমেন্স সব দিক থেকেই সামান্য হলেও কমে যায়-বিশেষ করে আমাদের দেশের কম সি.সি যুক্ত মোটরসাইকেল গুলোর । প্যাসেঞ্জারের ওজন যত বেশি, সমস্যা ঠিক ততটাই। সেগুলো হচ্ছে- হ্যান্ডেল কন্ট্রোল কঠিন হয়, হঠাৎ গতি বারানো যায়না, কোন বস্ত্তকে ক্রস করতে চাইলে স্থান ও সময় বেশি প্রয়োজন হয়, ব্রেকিং এর স্টপিং ডিসট্যান্স বেড়ে যায় অর্থাৎ একা থাকলে ব্রেক করলে বাইক যেখানে থামবার কথা ছিল; ডাবল থাকলে দেখবেন সেখানে না থেমে আরও দুরে গিয়ে বাইকটি থামবে। যেহেতু আমরা প্রায় প্যাসেঞ্জার বয়ে নিয়ে বেড়াই, সেহেতু আপনার বাইকের সাসপেনশন ও টায়ারের এয়ার প্রেসার এ্যাডজাস্ট করে রাখুন। প্যাসেঞ্জারের জন্য কত এয়ার প্রেসার লাগে তা আপনার বাইকের ম্যানুয়ালেই দেয়া আছে। পিছনে প্যাসেঞ্জার থাকলে রিয়ার ভিউ মিরর রাস্তায় নেমে এ্যাডজাস্ট করে নিন। সাধারনত: যে গতিতে বাইক চালান, প্যাসেঞ্জার বহনের ক্ষেত্রে তার চেয়ে কম গতিতে চালাবেন। থামতে হলে বেশ আগে থেকেই প্রস্ত্ততি নিন। হঠাৎ থামতে চাইলে তাকে সাবধান করুন। বাঁক ঘুরতে চাইলে যথেষ্ঠ জায়গা ও সময় নিয়ে ধীরে বাঁক ঘুরুন। প্যাসেঞ্জারকে নিচের দেওয়া নির্দেশ গুলো মেনে চলতে বলুন তাতে আপনার ও তাঁর দু’জনেরই মঙ্গল। সুরক্ষার জন্য আপনি যা পরবেন, তাকেও পরতে বলুন। অন্তত: হেলমেট অবশ্যই পরতে হবে।
  • ইঞ্জিন স্টার্টের পর তাকে মোটরসাইকেলে উঠতে বলুন। (এটা খুব প্রয়োজনীয় নয়।)
  • আপনার খুব কাছাকাছি বসতে বলুন ।
  • আপনার কোমর, বেল্ট বা বাইকের প্যাসেঞ্জারের জন্য সীটের নীচের হ্যান্ডেল শক্ত করে রাখতে বলুন।
  • তার পা সবসময় ফুট রেস্টে রাখতে বলুন-এমনকি বাইক থেমে গেলেও। দুই পা দিয়ে ব্যালান্স রাখার দায়িত্ব আপনার- প্যাসেঞ্জার পা নামালে বরং উল্টোটাই হয়।
  • চেন, চাকা ও এগজস্ট মাফলার (সাইলেন্সার পাইপ) থেকে পা যেন নিরাপদ দূরত্বে থাকে।
  • আপনি যা করবেন সে যেন আপনার শরীরের অংশের মত কাজ করে। আপনি কাত হলে সেও হবে ইত্যাদি।
  • অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা ও নড়াচড়া বন্ধ রাখতে বলুন।
  • বাজে রাস্তায় শক্ত করে ধরার প্রতি বেশি নজর দিতে বলুন।
  • নড়চড়ে বসতে চাইলে আপনাকে যেন অবশ্যই আগে বলে নেয়। বাঁক ঘুরতে চাইলে সব নড়াচড়া নিষেধ। রাস্তা যেদিকে সেদিকে তাকালে ভাল হয়।

মাল বহন:

মোটরসাইকেল মূলত: মালবহনের জন্য তৈরী নয়। তবে প্রয়োজনে তা করতেই হয়। বাইকের ম্যানুয়ালে দেখুন আপনার বাইক কত কেজি লোড বহন করতে সক্ষম। সাধারনত: ১২৫ সি.সি. মোটরসাইকেলে ১৫০ কেজি পর্যন্ত বলে থাকে। আমরা সাধারনত: তারচেয়ে অনেক বেশি করে থাকি। তারপরও অতিরিক্ত বোঝা বহন না করায় ভালো। প্যাসেঞ্জার বহনের মত এক্ষেত্রেও সাসপেনশন ও টায়ার প্রেসার চেক করা দরকার। 
যথেষ্ঠ শক্ত করে আপনার লোডটি বেঁধে নিন। পিছনের ক্যারিয়ার কিন্তু মাল বহনের জন্য তৈরী হয়নি। স্যাডল ব্যাগ থাকলে সেটাতে রাখতে পারেন। তবে খুব হালকা হলে পিছনের ক্যারিয়ারে ভালমত বেঁধে নিতে পারেন। এমন ভাবে বাঁধুন যাতে ব্যাক লাইট, সিগন্যাল লাইট ঢাকা না পড়ে। তবে এটা নিয়ম না। আপনার লোডটি পিছনের চাকা অ্যাক্সেলের সরাসরি উপরে বা সামনে থাকবে। লক্ষ্য রাখবেন লোডটি যেন অন্যদিকে ঝুলে না পড়ে মাঝ বরাবর থাকে। পিছনের ক্যারিয়ার কিন্তু পিছন চাকার অ্যাক্সেলের পিছনে। সুতরাং সেখানে ভারী লোড নেওয়া একেবারেই অনুচিত। মাঝে মাঝে থেমে লোড ঠিকমত বাঁধা আছে কিনা পরীক্ষা করে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। 
06/  

গ্রুপ রাইডিং:

এখন আমরা শিখবো কি করে গ্রুপ রাইডিং করতে হয়। দলবেঁধে মোটরসাইকেলে ঘুরতে বেশ মজা লাগে। মজাটা আরও বেড়ে যাবে যখন বেশ কিছু সংকেত ব্যবহার করে রাইডিং করা হবে। তাছাড়া নিয়ম জানা থাকলে আনন্দের সাথে নিরাপত্তা যুক্ত হবে। উল্টাপাল্টা চালাতে হয়তো থ্রিল অনুভব করা যায়। কিন্তু কেউ একজন পড়ে গেলেই সব মজা নষ্ট হয়ে যাবে। 
  • সময়মত ট্যাংকে ফুয়েল ভর্তি করে জায়গামত পৌঁছান।
  • বন্ধুদের সাথে আলোচনা করে নিন কোথায় থামবেন, কোথায় ফুয়েল দরকার হলে নেবেন, কোন রাস্তা দিয়ে কোথায় যাবেন সেটা আগে থেকেই ঠিক করা থাকলে পথ হারানোর ভয় থাকেনা। হাত দিয়ে কিভাবে সংকেত দিতে হয় সবাই শিখে নিলে খুব কাজে আসবে। যিনি বাইক চালানোতে সবচেয়ে অভিজ্ঞ এবং রাস্তা সম্পর্কে পূর্ব পরিচিত তাকে লিডার হিসাবে সামনে থাকতে বলুন।
  • তিন বা পাঁচ জনে একটা করে গ্রুপ করুন। প্রত্যেক গ্রুপে একজন করে লিডার থাকবে। বড় গ্রুপের চাইতে ছোট গ্রুপে সুবিধা বেশি।
  • যারা অনভিজ্ঞ তাদের লীডারের একদম পিছনে রাখুন। তাহলে তাকে তারচেয়ে অভিজ্ঞ রাইডার তার দিকে লক্ষ্য রাখতে পারবে।
  • মোবাইল ফোন, ফার্স্ট এইড বক্স, টুল কিট প্রত্যেক গ্রুপে অন্তত: একটা করে থাকা উচিত। যাতে কোন সমস্যায় না পড়েন।
  • পাশাপাশি বাইক চালাবেননা। নইলে সয়ার্ভ করতে গেলে সমস্যায় পড়বেন। একই লাইনের প্রতি বাইকের মধ্যে দুই সেকেন্ড দূরত্ব থাকবে। 
  • রিয়ার ভিউ মিররে চেক করুন আপনার পেছনের রাইডার কত দুরে আছে। খুব বেশি দুরে হলে গতি স্লো করে তাকে আপনার দু’ সেকেন্ড দূরত্বে আসার সুযোগ দিন। সবাই একই গতিতে চললে গ্রুপ রাইডিং মজার হয়।
  • হঠাৎ পিছিয়ে পড়লে ঘাবড়াবেন না। নিয়ম অনুযায়ী সামনের চালকগণ গতি কমিয়ে আবার গ্রুপ তৈরীতে সহায়তা করবে। সঙ্গীকে ধরার জন্য অযথা জোরে চালাবেননা বা নিয়ম ভাঙ্গবেননা।
  • কোন গাড়ীকে ওভারটেক করতে চাইলে একজন একজন করে করুন। একসাথে সবাই মিলে ওভারটেক করবেননা। 

গ্রুপ রাইডিং সংকেত

গ্রুপ রাইডিং বেশ কিছু সংকেত ব্যবহার করা হয়। শিখে রাখলে বেশ কাজে আসবে। হাত দিয়ে কিভাবে সংকেত ব্যবহার করতে হয় তা ছবি সহ বর্ননা করা হলো:- 

থামুন- বাম হাত সোজা করে ফুয়েল প্রয়োজন- বাম হাতের হাতের তালু দেখাতে হবে তর্জনী দিয়ে ফুয়েল ট্যাংক দেখাতে হবে। 

টার্ন সিগন্যাল অন- হাত লম্বা করে দিয়ে মুঠি পাকান। 

গতি কমাও- হাত লম্বা করে দিন, তালু থাকবে মাটির দিকে। এরপর নিচের দিকে হাতটি নামাতে হবে। 

গতি বারাও- হাত লম্বা করে দিন, তালু থাকবে উপর দিকে, তারপর উপরে ওঠাতে হবে। হাত ওঠানোর সময় হাতের তালু সামনের দিক নির্দেশ করবে। 

রাস্তা খারাপ- বাম দিকে হলে বাম হাত দিয়ে নির্দেশ করুন; ডান দিকে হলে ডান পা নামিয়ে নির্দেশ করুন। 

আরামের জন্য থামা প্রয়োজন! হাত সোজা রেখে মুঠো পাকিয়ে হাল্কা ভাবে ওঠাতে নামাতে হবে।

পানি ও খাবার খাওয়ার বিরতি- হাত থাকবে মুষ্টিবদ্ধ; বুড়ো আঙ্গুল মুখের দিকে নির্দেশ করবে।

ফলো মি (আমাকে অনুসরণকর)- হাত কাঁধ বরাবর উঠিয়ে হাতের তালু সামনের দিক নির্দেশ করবে। 

তুমি সামনে গিয়ে লীড করো- বাম হাত সোজা বাম দিকে বাড়িয়ে তর্জনী বের করে হাত ৪৫ ঘুরিয়ে সামনের দিকে দেখাতে হবে। ছবি ভালমত দেখলে ব্যাপারটা পরিষ্কার বোঝা যাবে। 

এক লাইনে চল দুই লাইনে চল 
হাত উঠিয়ে তর্জনী দেখাতে হবে। হাত উঠিয়ে তর্জনী ও মধ্যমা দেখাতে হবে। 

মেকানিক্যাল সমস্যা 

মোটরসাইকেলের ঠিকমত যত্ন নিলে হঠাৎ করে সমস্যায় খুব কমই পড়তে হয়। কিন্তু যদি সমস্যায় পড়েন সেক্ষেত্রে কি করতে হবে তা এই অধ্যায়ে আলোচনা করবো। থামতে চাইলে রিয়ার ভিউ মিরর এবং মাথা ঘুরিয়ে দেখে নিন পিছনের অবস্থা। আপনার ব্রেক লাইট ঠিক নাও থাকতে পারে। শক্ত মাটি দেখে দাঁড়ান। কারণ মেইন স্ট্যান্ড শক্ত মাটি ছাড়া ব্যবহার করা সমস্যা হয়। রাস্তার খুব কাছে দাঁড়াবেননা। রাস্তা থেকে আট/দশ হাত দুরে মোটর সাইকেল থামান।

টায়ার পাংচার:

আপনার বাইকের টায়ারের এয়ার প্রেসার যেন ঠিক থাকে-সেটা লক্ষ্য রাখুন। তাছাড়া টায়ারের খাঁজ (ট্রেড) যেন ঠিক থাকে সেটা লক্ষ্য রাখুন। খুব ক্ষয়ে যাওয়া টায়ার হঠাৎ ফেটে গিয়ে বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। টায়ার যদি ফেটেই যায়, তাহলে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করতে হবে। সামনের টায়ার পাংচার হলে হ্যান্ডেল খুব ভারী মনে হবে। এতে মোটর সাইকেল নিয়ন্ত্রণ রাখা খুব কঠিন হয়ে যায়। পিছনের টায়ার পাংচার হলে মোটর সাইকেলে ঝাঁকুনি লাগতে পারে অথবা মোটরসাইকেল এদিক ওদিক চলে যেতে পারে। টায়ার ফ্ল্যাট হলে এই কাজগুলো করবেন:-
  • 1. টায়ার ফেটে যাওয়া অবস্থায় কক্ষণো ব্রেক করবেননা। যদি করতেই হয় তাহলে যে টায়ারটি অক্ষত আছে সেই চাকার ব্রেক ধীরে ধীরে করুন।
  • 2. থ্রটল/অ্যাক্সিলেটরও হঠাৎ কমিয়ে দিবেননা। হঠাৎ গতি কমিয়ে ফেললে বাইক নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। ধীরে ধীরে গতি কমান।
  • 3. হ্যান্ডেল শক্ত করে ধরে থাকুন, সামনের চাকা সোজা রাখার চেষ্টা রাখুন। এরপর ক্লাচ চেপে রাস্তার বাম পাশ ঘেঁষে থামুন।

থ্রটল আটকানো:

ধরা যাক,আপনি মোটর সাইকেল ৭০ কি:মি: বেগে চালাচ্ছেন হঠাৎ দেখলেন থ্রটল আটকে গেছে। কিছুতেই কোনদিকে ঘোরানো যাচ্ছেনা। এ’রকম পরিস্থিতি থেকে বাঁচার জন্যেই আপনার হ্যান্ডেল বারের ডান দিকে ‘‘ইঞ্জিন কীল সুইচ’’ দেওয়া আছে। থ্রটল আটকে গেলে এই সুইচ চেপে ইঞ্জিন বন্ধ করুন। এরপর ক্লাচ চেপে রাস্তার বাম পাশে ধীরে দুই ব্রেক ব্যবহার করে দাঁড়িয়ে পড়ুন। তবে আপনার বাইকে যদি এই ‘‘ইঞ্জিন কীল সুইচ’’ না থাকে, তাহলে ক্লাচ চেপে ব্রেক ব্যবহার করে রাস্তার বাম পাশে নিরাপদ জায়গা দেখে দাঁড়িয়ে পড়ুন। এরপর ইগনিশন চাবি ঘুরিয়ে ইঞ্জিন বন্ধ করুন। চলন্ত অবস্থায় ইগনিশন বন্ধ করতে যাবেন না।

ক্লাচ কেব্ল ছিঁড়ে যাওয়া:

রাস্তায় যাচ্ছেন-গিয়ার চেঞ্জ করা দরকার। ক্লাচ চাপলেন, কিন্তু কিছুই ফলাফল ঘটলোনা। অর্থাৎ আপনার ক্লাচ কেবলটি ছিঁড়ে গেছে। ব্যাপারটি খুব ভয়ানক নয়। ক্লাচ না চেপেও আপনি গিয়ার চেঞ্জ করতে পারেন। থ্রটল একদম জিরো পজিশনে এনে হালকা ভাবে গিয়ার চেঞ্জ করুন। তবে এ’রকম পরিস্থিতি ছাড়া এভাবে গিয়ার চেঞ্জ করবেননা। থামতে চাইলে গিয়ার একদম নিউট্রালে এনেই থামা উচিত। নইলে ঝাঁকুনি খাওয়ার সম্ভবনা থাকে। ক্লাচ কেবল ছাড়া আপনি বাধ্য হলে মেকারের কাছে যাওয়া পর্যন্ত চালাতে পারেন। এতে খুব বড় সমস্যা হবেনা।

চেইন ছিঁড়ে যাওয়া:

ইঞ্জিনের শক্তিটা পিছনের চাকায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে চেইনের কাজ। ঠিকমত দেখাশোনা করলে চেইন ছিঁড়ে যাবার সম্ভবনা কম। তবে ছিঁড়ে গেলে পিছনের চাকা লক্ড হয়ে যেতে পারে। যার ফলে আপনার বাইক স্কিড করতে পারে। চেইন ছিঁড়ে গেলে পিছনের চাকা ঘোরার শক্তি হারিয়ে ফেলে। এক্ষেত্রে থ্রটল সম্পূর্ন কমিয়ে দিয়ে ব্রেকের সাহায্যে নিরাপদ জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ুন। 

ইঞ্জিন সীজ: 

মাঝে মাঝে ইঞ্জিন হঠাৎ থেমে যেতে পারে। এর কারন ইঞ্জিন অয়েলের পরিমান কমে যাওয়া। পেট্রোলের অভাবেও এমনটা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ইঞ্জিন হঠাৎ থেমে গেলে হ্যান্ডেল শক্ত করে ধরে ক্লাচ চেপে ধরুন। এরপর ধীরে ব্রেক কষে রাস্তার বাম পাশ ঘেঁষে দাঁড়ান। ইঞ্জিন ওয়েল ঠিকমত আছে কিনা তা নিয়মিত চেক করুন। নইলে ইঞ্জিনের ক্ষতি হবে।
উপরের কারনগুলো ছাড়াও মাঝে মাঝে মোটর সাইকেলে কিছুতেই ব্যালান্স রাখা যায়না। হ্যান্ডেল আর সামনের চাকা শুধু এদিক ওদিক চলে যেতে যায়। ইংরেজীতে এই অবস্থাকে বলা হয়Wobble.এই অবস্থার জন্য দায়ী টায়ারের এয়ার প্রেসার, অতিরিক্ত লোড নেওয়া বা লোড নিয়মমত না বাঁধা বা রাখা, মোটরসাইকেলের সঠিক পার্টস ব্যবহার না করা ইত্যাদি। এ’অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে অতিরিক্ত লোড কমিয়ে দিন। সে সুযোগ না থাকলে মাল রাখার জায়গা পরিবর্তন করুন। কিভাবে লোড বহন করতে হবে তা আগেই আলোচনা করা হয়েছে। টায়ার প্রেসার, শক অ্যাবজর্বার চেক করুন। যেসব মোটরসাইকেলে উইন্ডশীল্ড ব্যবহার করা হয়, সেগুলো ঠিকমত বসানো হয়েছে কিনা তাও চেক করে নিতে হবে।
হ্যান্ডেল বার টাইট আছে কিনা, সামনের চাকার রীম সোজা আছে কিনা, অ্যালাইনমেন্ট ঠিক আছে কিনা, বিয়ারিং বা স্পোক ঢিলা আছে কিনা-এগুলো ভালমত দেখে নিতে হবে। এরপরও সমস্যা মনে হলে কোন পেশাদার মেকারের সাহায্য নিন। Wobbleঅবস্থায় যা করবেন তা হচ্ছে-
  • 1. ভালমত হ্যান্ডেল বার ধরুন; তবে Wobbleঅবস্থায় যুদ্ধ করবেননা।
  • 2. ধীরে ধীরে থ্রটল কমিয়ে মোটর সাইকেল থামাবেন। ব্রেক ব্যবহার করবেন। ব্রেকিং- এই অবস্থাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • 3. আপনার ওজন যেন সামনের দিকে থাকে তা লক্ষ্য করুন।
  • 4. এই অবস্থা ঠিক না হওয়া পর্যন্ত বাইক চালাবেননা।

কি করে ফুয়েল বাঁচাবেন?

পেট্রোলের দাম যেহেতু আকাশ ছোঁয়া সেহেতু তা বাঁচানোর নিয়মগুলো জেনে থাকা উচিত।
  • ৪০/৫০ কি:মি: গতিতে বাইক চালাবেন।
  • আপনার টায়ারের পাম্প টায়ারের নির্দেশ মত রাখুন। টায়ারে বাতাস কম থাকলে পেট্রোল খরচ বেড়ে যাবে।
  • আপনার বাইকের চেনের টেনশন (টান টান ভাব)যেন ঠিক থাকে। অতিরিক্ত ঢিলা চেন পেট্রোল খরচ বাড়িয়ে দেয়।
  • মোটরসাইকেল চালানোর সময় সবসময় ক্লাচ চেপে রাখবেননা।
  • অনেকক্ষন ধরে লো গিয়ারে মোটরসাইকেল চালালে ফুয়েল খরচ বাড়বে। টপ গিয়ারে ফুয়েল খরচ কম হবে।
  • সরাসরি রোদে মোটরসাইকেল রাখলে ফুয়েল বাষ্প আকারে উড়ে খরচ বাড়িয়ে তুলবে।
  • বাইক চালানোর সময় ব্রেক হালকা করে চেপে রাখবেননা।
  • ইঞ্জিন স্টার্ট থাকা অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় অযথা থ্রটল ঘুরাবেননা।
  • বেশি সময়ের জন্য দাঁড়াতে হলে ইঞ্জিন বন্ধ রাখুন।
  • বাইক চালানোর সময় যেদিকে এয়ার ফিল্টার আছে, সেদিকটা ঢেকে রাখবেননা।
  • ইঞ্জিন চালু অবস্থায় ঢেকে রাখবেননা; ইঞ্জিন অতিরিক্ত গরম হলে ফুয়েল খরচ বাড়বে।

এ্যাকসিডেন্ট থেকে বাঁচতে ১০ টি টিপস

  • মোটরসাইকেল চালানোর আগে সাইড স্ট্যান্ড তুলতে কখনও ভুলবেননা। ব্যাপারটা ছোট মনে হলেও আমার এক বন্ধু সা্ইড স্ট্যান্ডের কথা ভুলে যাওয়ায় আছাড় খেয়ে “কলার বোন” ভেঙ্গেছে। সুতরাং সাবধান!!
  • কর্ণারে কখনও ওভারটেকিং করবেননা। সোজা রাস্তায় সামনে ও পিছনে কেউ না আসলে তবেই ওভারটেকিং করবেন। চেষ্টা করুন যে গাড়ীকে ওভারটেকিং করছেন তার ড্রাইভার যাতে আপনাকে দেখতে পায়।
  • স্যান্ডর’র উপর হার্ড ব্রেক করবেননা। বিশেষ করে হাইড্রোলিক/ডিস্ক ব্রেক। স্লিপ করে বড় অ্যাক্সিডেন্ট ঘটে যেতে পারে।
  • ডানে বামে বাঁক ঘুরতে ইন্ডিকেটর লাইট ৩০ মিটার বা ৩০ সেকেন্ড আগেই জালাবেন। তাহলে পিছন থেকে ধাক্বা খাওয়ার আশংকা কমবে।
  • বাস-ট্রাক বা নসিমন করিমনের একদম পিছন পিছন চালাবেননা। দুই থেকে ৬ সেকেন্ড দুরে থাকুন। (সেকেন্ড দুরত্বের কথা আগেই আলোচনা করা হয়েছে।) এগুলোর কোন ব্রেক লাইট থাকেনা। তাছাড়া কার বা জিপ মোটরসাইকেলের চেয়ে দ্রুত থামতে পারে। মোটরসাইকেলে সেটা সম্ভব নয়।
  • মোটরসাইকেলের চালকের সাথে সহযাত্রী থাকলে ওভারটেকিং ও ব্রেকিং সব কিছুতেই খানিকক্ষণ সময় নেয়। সুতরাং হিসেব করে কাজ করুন।
  • প্রত্যেকের বাইক চালানোর নিজস্ব ক্ষমতা থাকে। যে গতিতে আপনি বাইক ইচ্ছামত থামাতে পারেন এবং স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন সেটাই আপনার বাইক চালানোর ক্ষমতা। নিজস্ব ক্ষমতার বাইরে যাবেননা। ক্ষমতা বারাতে চাইলে ফাঁকা রাস্তায় বার বার প্র্যাকটিস করুন।
  • লোকালয়ে আপনার বাইকের সর্বোচ্চ গতিবেগ ৪০ কি:মি: হওয়া উচিত। বৃদ্ধ, বাচ্চা, গরু-ছাগল, কুকুর, গ্রামের মহিলারা রাস্তায় খুবই আনাড়ী!
  • অতিরিক্ত ক্ষয়ে যাওয়া টায়ার বদলে ফেলুন। ঘন্টায় ৮০ কি:মি: গতিবেগে টায়ার বাষ্ট হলে কি হতে পারে বুঝতেই পারছেন।
  • হেলমেট, গ্লাভস, জুতো পরে বাইক চালান। 
07/  

বাইককে গোসল করানো:

বিশেষ করে বর্ষাকালে বাইক কাদায় মাখামাখি হয়ে থাকে। মাঝে মাঝে গোসল না দিলে ঘামের দুর্গন্ধ -না সরি, মরিচা
পড়ার সম্ভবনা দেখা যায়। ডিস্ক ব্রেক থেকেও কেমন যেন আওয়াজ পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে নিজে নিজে বাড়ীতেও বাইক
ধুতে পারেন। এক টুকরো স্পঞ্জ, কার ওয়াশ (শ্যাম্পু হলেও চলবে, তবে কার ওয়াশ গুলোতে সিলিকন থাকায় বাইকের
পেইন্ট বেশিদিন স্থায়ী হয়। ‍স্পার্কেল কার ওয়াশটি বেশ ভাল।), সার্ফ এক্স্রেল, পুরনো টুথব্রাশ, পলিথিন ব্যাগ আর পানি হলেই যথেষ্ঠ। প্রথমে পলিথিন ব্যাগ দিয়ে আপনার বাইকের এগজস্ট পাইপ (সাইলেন্সার)টির ফুটোটা বেঁধে ফেলুন। যেন পানি ঢুকতে না পারে। পলিথিন দিয়ে ইগনিশন সুইচ ও অন্যান্য সুইচ গুলোও ঢেকে দিন। এরপর  প্রথমে শুধু পানি দিয়ে পুরো বাইকটি ধুয়ে ফেলুন। কাদা গুলো সরাতে ব্রাশ ব্যবহার করুন। এরপর ফুয়েল ট্যাংক, অন্যান্য প্লাস্টিক পেইন্টের অংশগুলো কার ওয়াশ পানিতে মিশিয়ে স্পঞ্জ ভিজিয়ে ধুয়ে নিন। অন্য কিছু দিয়ে ধুলে পেইন্ট এর আয়ু কমে।  মেটালিক অংশ ও টায়ার গুলো সার্ফ এক্সেল দিয়ে ধুতে হবে। নইলে সহজে পরিষ্কার হবেনা। ডিস্ক ব্রেকের অংশটুকু জোরে পানি দিয়ে ময়লা পরিষ্কার করতে হবে। স্পঞ্জ দিয়ে ডিস্কটিও পরিষ্কার করে নিবেন-তাহলে ব্রেক আরও ভালমত কাজ করবে। এরপর পুরো বাইকটি পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এখন ব্লোয়ার দিয়ে বাইকটিকে শুকিয়ে নিন। ১৫০০/- টাকা দামের ব্লোয়ারই যথেষ্ঠ। এটি দিয়ে আপনি পেপার টাইপ এয়ার ফিল্টারও নিজে নিজে পরিষ্কার করতে পারবেন। বিভিন্ন ইলেকট্রিক্যালের দোকানে পাওয়া যায়।
এবার অবশিষ্ট পানি শুকনো সুতি কাপড় দিয়ে মুছে নিন।
পালিশ লাগাতে পারেন। নতুন মোটরসাইকেলে দরকার নাই। এটাও পেইন্ট এর আয়ু কমায়। এত ঝামেলা করতে না চাইলে মেকানিকের কাছে ধুয়ে নিন। 

তেল মালিশ!!


বাইক ভালমত শুকিয়ে গেলে  বাইকের চেইনে ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করুন। তবে গিয়ার ওয়েল ব্যবহার করা বেস্ট। অন্যান্য স্প্রিং- যেগুলোতে তেল দেওয়া দরকার সেখানে অল্প অল্প ইঞ্জিন ওয়েল দিন। তবে খবরদার ডিস্ক ব্রেকের ডিস্কে কখনও তেল দিবেননা। অথবা পেছনের ড্রাম ব্রেকেও তেল দিতে যাবেননা। ব্রেকের কার্যকারিতা অনেক কমে যাবে। মেকানিকের কাছে গিয়ে ক্লাচ কেবল ও থ্র্রটল কেবল ৬ মাসে একবার পরিষ্কার করে লুব্রেকেটিং ওয়েল দিন। এখন আপনার বা্ইক আবার নতুন হয়ে উঠল। এখন বেরিয়ে পড়ুন কোন জানা অজানার পথে। 
08/  বাইকের কখন কোন বিষয়গুলো চেক করতে হবে : --